al quran

রমাদান মাসের ১ম জুমু'আ আহকামে সিয়াম ও কুরআন

তারিখ: ১৫-০৩-২০২৪ খৃ./০৪ রমাদান ১৪৪৫ হি.

إِنْ الحَمدُ للهِ نَحمَدُهُ وَنَستَعِينُهُ وَنَستَغفِرُه و نؤمن به و نتوكل عليه وَنَعُوذُ بِاللهِ مِن شُرُورٍ أَنفُسِنَا وَمِن سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَن يُهدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَن يُضلِلهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَن لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ سيدنا و مولانا مُحَمَّدًا عَبدُهُ وَرَسُولُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اما بعد فقد قال الله تبارك و تعالي يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ و قال رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ- فيا ايها الحاضرون رحمكم الله

মুয়াজ্জাজ মুহতারাম, আমরা সর্বপ্রথম আল্লাহর শুকরিয়া ও রাসূল স. এর প্রতি দরুদ পাঠ করছি। ভূমিকা: ইসলাম পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সিয়াম তার মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ তা’য়ালা তার বান্দাদেরকে গণনার জন্য যে বারটি চন্দ্র মাস দান করেছেন, তার মধ্যে বিশেষ সম্মানিত মাস হচ্ছে রমাদান। উম্মতে মুহাম্মদীর উপর রমাদানের পূর্ণমাস সিয়াম পালনকে ফরয করা হয়েছে। রমাদানেই পবিত্র কুরআন মাজীদসহ সকল আসমানী গ্রন্থ নাযিল করা হয়েছে। আজকের খুতবার বিষয়, ‘আহকামে সিয়াম ও কুরআন’ । আহকামে সিয়াম বা সিয়ামের বিধান: প্রাপ্ত বয়স্ক সকল মুসলমান নর-নারীর উপর

রমাদানের সিয়াম ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ – أَيَّامًا مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ وَأَنْ تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সাওম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্যে। তোমাদের মধ্যে কেই অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। আর যাদের জন্য সাওম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া- একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করা। যে ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য কল্যাণকর। আর সাওম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি তোমরা জানতে। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩-১৮৪)

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ .

রমাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতের জন্য এবং হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)

 

এ প্রসঙ্গে বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ স. বলেন:

اتَّقُوا الله وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا أُمَرَاءكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ

তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর, রমাদানের সিয়াম পালন কর, তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় কর, তোমাদের শাসকদের আনুগত্য কর তাহলেই তোমাদের প্রভূর বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিযি-৬১৪ ইফা) উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের আলোকে সাব্যস্ত হয় যে, রমাদানের সিয়াম উম্মতে মোহাম্মাদীর উপর ফরয। সুতরাং এ ফরযিয়াতকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই রমাদানের সাথে আল-কুরআনের সম্পর্ক: কুরআনের সাথে রমাদানের সম্পর্ক হল রমাদান মাসেই আল-কুরআন নাযিল হয়। ১ রমাদান ইব্রাহিম আ. এর উপর সহিফা, ৬ রমাদান তাওরাত, ১২ রমাদান যাবুর, ১৩/১৮ রমাদান ইঞ্জিল এবং ক্বদরের রাতে কুরআন নাযিল হয়, যা রমাদান মাসেই রয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা এ প্রসঙ্গে বলেন,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ

রমাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতের জন্য এবং হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ

নিশ্চয় আমি এই কুরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রাত্রিতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী (সূরা দুখান, আয়াত-৩)

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ –

নিশ্চয়, আমি কুরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদরে, আপনি কি জানেন লাইলাতুল কন্দর কি? লাইলাতুল কদর হচ্ছে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম । (সূরা কদর, আয়াত-১-৩) সিয়ামের ফজিলত

ক।

রামাদান সওয়াব সংগ্রহের মাস: এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন:

عَن أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرٍ رَمَضَانَ صُفِّدَتْ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ وَغُلِقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقَ مِنْهَا بَابٌ وَيُنَادِي مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِ أَقْصِرْ وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنْ النَّارِ –

শয়তান ও দুষ্ট জিনদের রামাদান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না ৷

একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও, হে মন্দ অন্বেষণকারী! থাম। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে এ মাসে বহু ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এরূপ ঘোষণা প্রতি রাতেই চলতে থাকে । (তিরমিযি-৬৭৯ ইফা) খ। সিয়াম পালনের মাধ্যমে শরীরের যাকাত আদায় হয়:

রাসূলুল্লাহ স. বলেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِكُلِّ شَيْءٍ زَكَاةً وَزَكَاةُ الْجَسَدِالصوم

প্রত্যেক জিনিসের যাকাত রয়েছে আর শরীরের যাকাত হলো সিয়াম। (ইবন মাজাহ্- ১৭৪৫ ইফা)

ছয়িমদের কে বিশেষ পাঁচটি জিনিস দান করা হয়

রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُعْطِيَتْ أُمَّتِي خَمْسَ خِصَالٍ الْمِسْكِ فِي رَمَضَانَ لَمْ تُعْطَهَا أُمَّةٌ قَبْلَهُمْ خُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحٍ وَتَسْتَغْفِرُ لَهُمْ الْمَلَائِكَةُ حَتَّى يُفْطِرُوا وَيُزَيِّنُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ كُلَّ يَوْمٍ جَنَّتَهُ ثُمَّ يَقُولُ يُوشِكُ عِبَادِي الصَّالِحُونَ أَنْ يُلْقُوا عَنْهُمْ الْمَئُونَةَ وَالْأَذَى وَيَصِيرُوا إِلَيْكِ وَيُصَفَّدُ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ فَلَا يَخْلُصُوا إِلَى مَا كَانُوا يَخْلُصُونَ إِلَيْهِ فِي غَيْرِهِ وَيُغْفَرُ لَهُمْ فِي آخِرٍ لَيْلَةٍ قِيلَ

يَا رَسُولَ اللَّهِ أَهِيَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ قَالَ لَا وَلَكِنَّ الْعَامِلَ إِنَّمَا يُوَفَّى أَجْرَهُ إِذَا قَضَى عَمَلَهُ

আমার উম্মতকে রমাদানে পাঁচটি বৈশিষ্ঠ্য দান করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তীদেরকে দান করা হয় নি। ১. ছয়িমদের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষাও উত্তম। ২. তারা যতক্ষণ না ইফতার করে ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তার জন্য মাগফিরাত কামনা করতে থাকেন। ৩. আল্লাহ প্রতিদিন তাদের জন্য জান্নাতকে সুসজ্জিত করেন। ৪. এ মাসে শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ৫. আর নেক বান্দাদের জন্য শেষ রাত্রে মাগফিরাত দান করা হয়। রাসূলুল্লাহ স. কে জিজ্ঞেস করা হল, সেটা কি লাইলাতুল কদরের কথা! তিনি বললেন, না। বরং আমলকারী যখন তার আমল সম্পূর্ণ করবে, তখন তার প্রতিফল তাকে পুরাপুরি আদায় করে দেয়া হবে ৷ (মুসনাদে আহমদ-৭৫৭৬) ঘ। সিয়ামের প্রতিদান দিবেন স্বয়ং আল্লাহ নিজেই

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন:

هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ عَنْ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْع مِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَةً –

আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, বনী আদমের প্রতিটি আমলের সওয়াব আল্লাহর ইচ্ছায় দশ থেকে সাতশ গুণে বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ বলেন, সিয়াম ব্যতীত । কেননা সিয়াম আমার জন্যই আর আমি নিজেই তার প্রতিদান দিব। সে তার জৈবিক চাহিদা ও পানাহার পরিহার করেছে। (মুসলিম-২৫৭৮ ইফা; ইবন মাজাহ-১৬৩৮ ইফা)

পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়: এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন:

عن أبي هريرة قال قال رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ –

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ স. বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমাদান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী-১৭৮০ ইফা; মুসলিম-১৬৫৪ ইফা)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়:  এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন:

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِي قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بَعَّدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا 

যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন সিয়াম রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরে সরিয়ে দিবেন। (বুখারী-২৬৪৩ ইফা; মুসলিম- ২৫৮৪ ইফা)

 সিয়াম কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে:

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ স. বলেন:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفَعْنِي فِيهِ

 لِلْعَبْدِ يَوْمَ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفَعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ 

 

সিয়াম এবং কুরআন কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে পরওয়ারদেগার! আমি তাকে দিনে খাদ্য গ্রহণ এবং জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ-৬৬২৬) সাওম পালনকারীর মর্যাদা প্রসঙ্গে

 বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ: রাসূলুল্লাহ স. বলেন:

عَنْ سَهْلٍ رضى الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ لا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ 

সাহল ইবন সা’দ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম ‘রাইয়্যান’। কিয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারীগণ এ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। ঘোষণা দেয়া হবে সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাড়াবে, তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে, অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না । (বুখারী-৩০২৯ ইফা; মুসলিম-২৫৮১ ইফা)

ইফতার করালে রোজাদারের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়: রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا

যায়েদ ইবন খালেদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করায় সেও রোযাদারের সমান সাওয়াব পাবে অথচ রোযাদারের সাওয়াব কমতি করা হয় না। (তিরমিযি-৮০৫ ইফা; ইবন মাজাহ-১৭৪৬ ইফা)

সিয়াম ঢাল স্বরূপ: যুদ্ধের ময়দানে ঢাল যেমন শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে তেমনি রোজাদারকে গুনাহ্ থেকে রক্ষা করে সিয়াম। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةً قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصِّيَامُ جُنَّةٌ

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. বলেন, সিয়াম ঢাল স্বরূপ। (বুখারী-১৭৭৩ ইফা; মুসলিম-২৫৭৬ ইফা)

কুরআন পরিচিতি

কুরআন নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছে এভাবে,

بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَّجِيدٌ فِي لَوْحٍ مَّحْفُوظٍ وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ – نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ – عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ بِلِسَانٍ عَرَبِيِّ مُبِينٍ – وَإِنَّهُ لَفِي زُبُرِ الْأَوَّلِين

এ কুরআন বিশ্বজগতের রবের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত আত্মা জিবরাঈল তা নিয়ে এসেছেন, আপনার অন্তরে, যাতে সতর্ককারী হতে পারেন। স্পষ্ট আরবী ভাষায়। আগের কিতাব (তাওরাত ও ইঞ্জীলে) এর উল্লেখ আছে। (সূরা শুয়ারা, আয়াত-১৯২-১৯৬)

আল-কুরআন নির্ভুল গ্রন্থ: কুরআনুল কারিম এমন একটি গ্রন্থ, যার মধ্যে ভুলত্রুটি নেই এবং যার মধ্যে কোন রকম সন্দেহের অবকাশও নেই। এর বিশুদ্ধতার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে মহান আল্লাহ বলেন,

ذلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ

এটা সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথপ্রদর্শনকারী মুত্তাকীদের জন্য । (সূরা বাকারা, আয়াত-২)

পবিত্র কুরআনের ভূল ধরার অনেকেই চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কুরআন নাযিলের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কোন রকমের ভুলত্রুটি বের করতে সক্ষম হয় নি। এটাই কুরআনের মু’জিজা। 

ওলীদ বিন মুগিরা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সে পিতৃপরিচয়হীন- কুরআন বলছে,

وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ هَمَّازٍ مَشَاءٍ بِنَمِيمٍ مَنَّاعٍ لِلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ عُتُلٍ بَعْدَ ذَلِكَ زَنِيمٍ أَنْ كَانَ ذَا مَالٍ وَبَنِينَ

তাদের কথা মতোও চলবেন না যারা কথায় কথায় কসমকারী, হীন, গীবতকারী, কুৎসা রটনাকারী, ভাল কাজে বাধা দানকারী, সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, বদ মেজাজী তদুপরি পিতৃ-পরিচয়হীন। এ কারণে যে, সে ধন-জনের অধিকারী। (সূরা ক্বলাম, , আয়াত-১০-১৪) সূরা লাহাবে আবু লাহাব সম্পর্কে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَّبِ فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ۔

দু’টি ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দু’হাত এবং ধ্বংস হয়েছে সে নিজেও। তার ধনসম্পদ ও উপার্জন তার কোন কাজে আসে নি। অচিরেই সে দগ্ধ হবে লেলিহান আগুনে, আর তার স্ত্রীও যে ইন্ধন বহন করে। তার গলায় থাকবে পাকানো রশি। (সূরা লাহাব)

কুরআনের চ্যালেঞ্জ

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

কুরআন আল্লাহর বাণী। এটা কোন মানুষের বাণী নয়। এ প্রসঙ্গে

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ 

নাকি তারা বলে, তিনি এটা নিজে রচনা করেছেন? বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে তোমরা এর অনুরুপ দশটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার (এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও ৷ (সূরা হুদ, আয়াত-১৩)

কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য

I am text block. Click edit button to change this text. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.