আরবী মাস সমূহ
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা যিনি দিন রাত সময় এর মালিক যিনি সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে বার মাস দিয়ে পুরো বছরকে সাজিয়েছেন এবং বার মাস থেকে ৪ টি মাস কে সম্মানিত করেছেন। যে মাস গূলোতে সকল প্রকার যুলুম অত্যাচার ও রক্তপাত পাপাচার নিষিদ্ধ কিন্তু দূর্ভাগ্য হলেও সত্য আমরা অনেকেই এই মাস গূলোর নাম ও জানিনা এবং যে চারটি মাস সম্মানিত সে মাসগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করিনা।নিচে আমরা আরবী মাস গূলোর নাম ও সম্মানিত মাস সমূহের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
আরবী মাস সমূহ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস এর বাণী
বছর ও আশহুরে হুরুম (সম্মানিত মাস সমুহ) সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَات وَالأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلاَ تَظْلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ وَقَاتِلُواْ الْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَآفَّةً وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
অর্থঃ “নিশ্চই মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বারো মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন জুলুম করো না। [সূরা তাওবা:৩৬]
হযরত আবু বাকরাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ رواه البخاري
অর্থঃ “বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর লাগোয়া জিলক্বদ, জিলহাজ্ব ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শা’বানের মধ্যবর্তী রজব।” – [বুখারী:২৯৫৮]
আরবী মাস সমূহের নাম
ক্রমিক | আরবী মাসের নাম (আরবী) |
আরবী মাসের নাম (বাংলা) | ক্রমিক নং | আরবী মাসের নাম (বাংলা) | আরবী মাসের নাম (আরবী) |
১ | مُحَرَّمْ | মুহার্রম | ৭ | رَجَبْ | রজব |
২ | صَفَرْ | ছফর | ৮ | شَعْبَانْ | শা’বান |
৩ | رَبِيْعُ الْاَوَّالْ | রবিউল আওওয়াল | ৯ | رَمَضَانْ | রমাদ-ন |
৪ | رَبِيْعُ الثّا نِيْ | রবিউস সানী | ১০ | شَوَّالْ | শাও ওয়াল |
৫ | جَمَادِيُ الْاٌوْلَى | জমাদিউল উলা | ১১ | ذُوْالْقَعْدَةْ | জুল ক’দাহ্ |
৬ | جَمَادِيُ الثَّانِيْ | জমাদিউস সানী | ১২ | ذُْالْحَجِّ | জুল হাজ্জ |
মুহাররম মাস
মুহাররম, হিজরি সনের প্রথম মাস। একটি মহান বরকতময় মাস। এমাস ‘আশহুরে হুরুম’ (সম্মানিত মাসসমুহ) তথা যাবতীয় যুলুম ও রক্তপাত নিষিদ্ধ ও বিশেষভাবে সম্মানিত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। এই সম্মানিত মাসে পূর্ববর্তী নবীদের যুগে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত হারাম ছিল তাদের মধ্য একটি। মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন বলেন class=”arbstyle”فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ অর্থাৎ“তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো যুলুম করো না।” কেননা এই সম্মানিত মাস সমূহে তোমরা কোনো অন্যায় করো না। কারণ এ সময়ে সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ও মারাত্মক।
মুহাররম মাসের গুরুত্ব হওয়ার কারণ : যে বিশেষত্বগুলোর কারণে এ মাসটি ইসলামী শরিয়তে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা হল :
১. বারটি মাসের মধ্যে এ মাসটি সর্বপ্রথম। (বুখারি/২৯৫৮)
২. হাদিস শরিফে এ মাসটিকে আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে। (মুসলিম/১৯৮২)
৩. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে চারটি মাসকে সম্মানিত বলে অভিহিত করেছেন তার মধ্যে মুহাররম একটি। (সূরা তাওবা/৩৬)
৪. হারাম মাসগুলোর সম্মানার্থে প্রাক ইসলাম যুগেও মুশরিকরা এই মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা থেকে বিরত থাকত।
৫. এ মাসের মধ্যে এমন একটি দিন আছে যাকে ‘আশুরার দিন’ বলা হয়। যে দিনটিতে ছওম রাখলে বিগত এক বছরের পাপরাশি মোচন হয়। (মুসলিম/১৯৭৬)
আশুরা অর্থ : আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশের’ (দশম) শব্দ থেকে এসেছে। ‘আশের’ হচ্ছে ‘আশারা’ (দশ) শব্দের বিশেষণ। অতএব আশুরা অর্থ হচ্ছে দশম বা দশক সেহেতু মুহাররম মাসের ১০ম দিবসকে আশুরা বলা হয়। (লিসানুল আরব, ৪/৫৬৯) আর এই শাব্দিক পরিবর্তনের ফলে সম্মানের অর্থ পাওয়া যায়। যেহেতু দিবসটি অতি সম্মানিত সেহেতু এ দিবসটি আশুরার দিবস বলে পরিচিত। (ফাতহুলবারী৪/৩১১)
আশুরা দিবসের গুরুত্ব হওয়ার কারণঃ
১. এ দিনেই মহান আল্লাহ দুনিয়া সৃষ্টি করেন।
২. এই দিনে প্রথম মানব হযরত আদম (আ:) কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘খলীফা’ রূপে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন এবং এ দিনেই তাঁর তওবা কবূল হয়।
৩. হযরত নূহ (আ:) এ দিনেই মহাপ্লাবন শেষে কিশতীর সকল আরোহীসহ নিরাপদে ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করেন। আবার এ দিনেই হযরত ইদ্রীস (আ:) স্বশরীরে জান্নাতে গমন করেন।
৪. হযরত আইয়ুব (আ:) দীর্ঘকাল রোগভোগের পর আরোগ্য লাভ করেন এবং হযরত ইউনুস (আ:) চল্লিশ দিন মাছের পেটে অবস্থানের পর মুক্তি লাভ করেন।
৫. এই মুহাররমের দশ তারিখেই হযরত ইবরাহীম (আ) নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে সহীহ-সালামতে বের হয়ে আসেন এবং হযরত মুসা (আ:) বনী ইসরাইলকে ফেরআউন কবল থেকে উদ্ধার করেন, আর ফেরআউন তার দলবলসহ লোহিত সাগরে নিমজ্জিত হয়।
৬. আবার যেদিন আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী হযরত ঈসা (আ:) ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র। চক্রান্ত থেকে উদ্ধার করে আপন সান্নিধ্য উঠিয়ে নেন, সেদিনটিও ছিল এই আশুরার দিন।
৭. আর হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী এ দিনেই সংঘটিত হবে কিয়ামত ‘মহাপ্রলয়’।
৮. এই দিনে ইবরাহীম (আ.)-কে নমরূদের আগুন থেকে হিফাযত করা হয়।
আশুরা সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারনাঃ উপরে উল্লেখিত কারণগুলোর কারণেই আশুরার এত মহত্ত। কিন্তু আজকে সত্য ও পরিষ্কার ইতিহাস বিকৃত করে একশ্রেণীর লোক আশুরার দিনে কারবালার ইতিহাস সংযুক্ত করে বলার চেষ্টা করছে যে, ঐতিহাসিক কারবালার দিনে ইমাম হুসাইন (রা.) নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন তাই এই দিনের এত গুরুত্ব। কিন্তু কারবালার যুদ্ধ হয়েছিল হিজরি ৬০ সালে আর আশুরার ফযজিলত ও গুরুত্ব এর আগ থেকেই যা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। প্রতি বছর মুহাররম মাস আসলেই একশ্রেণীর লোকেরা না বুঝে ইমাম ইয়াযিদকে গালিগালাজ করে থাকে আর হুসাইন (রা.)’র মৃত্যু শোকে শোকগাথা রচনা করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। মুহাররমের তাজিয়া, নিশানা, মার্সিয়া, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এই সমস্ত হারাম কাজ করে শোক পালন করে থাকে এবং অন্যান্য সমারোহ ও এ সবের মধ্যে মাতম করা জাহেলিয়াতের প্রথা ছাড়া আর কিছুই না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন- সে আমার দলভুক্ত নয় যে মৃত্যু শোকে বেহাল হয়ে গাল চাপরায়, কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং বিনেকি করে কাঁদে। (বুখারি ও মুসলিম) শুধু তাই নয় বরং হুসাইন (রা.) শাহাদাত বরণ সম্পর্কেও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।
মুহাররম মাসের ও আশুরা দিনের আমলসমূহঃ
১. এ মাসের আমল শুধু তা-ই, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বলে দিয়ে গেছেন। তিনি এ মাসে অধিক পরিমাণে নফল ছিয়াম এর কথা বলেছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ অর্থাৎ, “রমযানের পর সর্বোত্তম ছিয়াম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররম (মাসের ছিয়াম )।” -সহিহ মুসলিম,১৯৮২
২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন-নবী করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) যখন মক্কা হতে মদিনা শরীফে হিজরত করে মদিনা শরীফে তাশরীফ নিয়ে ছিলেন,তখন মদিনার ইহুদীদেরকে আশুরার ছওম রাখতে দেখে তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা আশুরার ছওম কেন রাখ? উত্তরে তারা বলল, এ দিনটা অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানিত, কেননা এই দিনে আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাইলদেরকে তাদের শত্রু ফেরাউন হতে পরিত্রান দিয়ে ছিলেন। এ কারনে আমরা ছওম এর মাধ্যমে ঈদ বা খুশি পালন করি, যেন তার স্মরন সব সময় বিদ্যমান থাকে।হুজুর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)বললেন,হযরত (আলাইহিস সালাম) এর বিজয়ের দিন পালনে আমরা তোমাদের থেকে বেশি অধিকারী।অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) নিজে ছওম রাখলেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে ছওম রাখার নির্দেশ দিলেন।[বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ ]
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ মুহাররম ছওম রেখেছেন। কিন্তু ইহূদী ও নাছারারা শুধুমাত্র ১০ই মুহাররমকে সম্মান করত এবং ছওম পালন করত। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরোধিতা করার জন্য ঐ দিনসহ তার পূর্বের অথবা পরের দিন ছওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব সুন্নাত হ’ল, ৯ ও ১০ই মুহাররম অথবা ১০ ও ১১ই মুহাররমে ছওম পালন করা। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
حِيْنَ صَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى. فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّىَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আশূরার ছওম পালন করলেন এবং ছওম পালনের নির্দেশ দিলেন, তখন ছাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইহূদী ও নাছারাগণ এই দিনটিকে (১০ই মুহাররম) সম্মান করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আগামী বছর বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ই মুহাররম সহ ছওম রাখব’। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররম আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়ে যায়। [মুসলিম:১১৩৪]
অন্য হাদীসে এসেছে, ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, صُوْمُوْا يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَخَالِفُوْا فِيْهِ الْيَهُوْدَ صُوْمُوْا قَبْلَهُ يَوْماً أَوْ بَعْدَهُ يَوْماً অর্থাৎ’তোমরা আশূরার দিন ছওম পালন কর এবং ইহুদীদের বিরোধিতা কর। তোমরা আশুরার সাথে তার পূর্বে একদিন বা পরে একদিন ছওম পালন কর’। [বায়হাক্বী ৪/২৮৭]
এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার ছওম কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল ১০ তারিখের ছওম পালন করা। এর চেয়ে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে ৯ বা ১১ তারিখের ছওম রাখা। এমনিভাবে মুহররম মাসে ছওম এর সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফযিলতও ততই বাড়তে থাকবে।
৪. আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, و صِيَامُ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ
অর্থঃ ‘আশুরা বা ১০ই মুহাররমের সিয়াম আমি আশা করি আল্লাহর নিকটে বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গোনাহের কাফফারা হিসাবে গণ্য হবে’।
[মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪৪; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৯৪৬]
আশুরায় বর্জনীয় কাজ সমূহঃ
আশুরার দিন আমাদের দেশের মুহাররম আমাদের দেশের শী‘আ, সুন্নী সকলে মিলে অগণিত শিরক্ ও বিদ‘আতে লিপ্ত হয় ।যা নিম্নে বর্নিত হলঃ
১. মুহাররম মাস কে শোকের মাস হিসাবে পালন করা হয়।
২. হোসাইন (রাঃ) এর ভূয়া কবর তৈরী করে রাস্তায় তা‘যিয়া বা শোক মিছিল করা হয়।ঐ ভূয়া কবরে হোসাইন (রাঃ) এর রূহ হাযির হয় ধারণা করে তাকে সালাম করা হয়। তার সামনে মাথা ঝুকানো হয়। সেখানে সিজদা করা হয়, মনোবাঞ্ছা পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করা হয়।
৩. মিথ্যা শোক প্রদর্শন করে বুক চাপড়ানো হয়, বুকের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। ‘হায় হোসেন’ ‘হায় হোসেন’ বলে মাতম করা হয় নিজের শরীর কে ছুরি দিয়ে রক্তাক্ত করা হয়।
৪. রাস্তা-ঘাট রং-বেরং সাজে সাজানো হয়।
৫. লাঠি-তীর-বলম নিয়ে যুদ্ধের মহড়া দেওয়া হয়।
৬. হোসাইন (রাঃ) এর নামে কেক ও পাউরুটি বানিয়ে ‘বরকতের পিঠা’ বলে বেশী দামে বিক্রি করা হয়।
৭. হোসাইন (রাঃ) এর নামে ‘মোরগ’ পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে যুবক-যুবতীরা পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঐ ‘বরকতের মোরগ’ ধরার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে।
৮. কালো পোষাক পরিধান বা কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়।
৯. অনেকে শোকের মাস ভেবে এই মাসে বিবাহ-শাদী করা অন্যায় মনে করে থাকেন। ঐ দিন অনেকে পানি পান করা এমনকি শিশুর দুধ পান করানোকেও অন্যায় ভাবেন।
১০. উগ্র শী‘আরা আয়েশা (রাঃ)-এর নামে বেঁধে রাখা একটি বকরীকে লাঠিপেটা করে ও অস্ত্রাঘাতে রক্তাক্ত করে বদলা নেয় ও উল্লাসে ফেটে পড়ে। তাদের ধারণা মতে আয়েশা (রাঃ)-এর পরামর্শক্রমেই আবুবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অসুখের সময় জামা‘আতে ইমামতি করেছিলেন ও পরে খলীফা নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেকারণে আলী (রাঃ) খলীফা হ’তে পারেননি (নাঊযুবিলাহ)। ওমর, ওছমান, মু‘আবিয়া, মুগীরা বিন শো‘বা (রাঃ) প্রমুখ জলীলুল ক্বদর ছাহাবীকে এ সময় বিভিন্নভাবে গালি দেওয়া হয়।
আশূরা উপলক্ষ্যে প্রচলিত উপরোক্ত বিদ‘আতী অনুষ্ঠানাদির কোন অস্তিত্ব এবং অশুদ্ধ আক্বীদা সমূহের কোন প্রমাণ ছাহাবায়ে কেরামের যুগে পাওয়া যায় না। আল্লাাহ ব্যতীত কাউকে সিজদা করা যেমন হারাম, তা‘যিয়ার নামে ভূয়া কবর যেয়ারত করাও তেমনি মুর্তিপূজার শামিল।এতদ্ব্যতীত কোনরূপ শোকগাথা বা মর্সিয়া অনুষ্ঠান বা শোক মিছিল ইসলামী শরী‘আতের পরিপন্থী। কোন কবর বা সমাধিসৌধ, শহীদ মিনার বা স্মৃতি সৌধ, শিখা অনির্বাণ বা শিখা চিরন্তন ইত্যাদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করাও একই পর্যায়ে পড়ে। অনুরূপভাবে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ হল ছাহাবায়ে কেরামকে গালি দেওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَتسُبُّوا أَصْحَابِىْ فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَنَصِيْفَهُ، ‘তোমরা আমার ছাহাবীগণকে গালি দিয়ো না। কেননা (তাঁরা এমন উচ্চ মর্যাদার অধিকারী যে,) তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাঁদের এক মুদ বা অর্ধ মুদ অর্থাৎ সিকি ছা‘ বা তার অর্ধেক পরিমাণ (যব খরচ)-এর সমান ছওয়াব পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না’।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৯৯৮ ‘ছাহাবীগণের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৫৭৫৪।] শোকের নামে দিবস পালন করা, বুক চাপড়ানো ও মাতম করা ইসলামী রীতি নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُوْدَ وَشَقَّ الْجُيُوْبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ‘ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি শোকে নিজ মুখে মারে, কাপড় ছিঁড়ে ও জাহেলী যুগের ন্যায় মাতম করে’।[বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১৭২৫ ‘জানাযা’ অধ্যায়।] অন্য হাদীছে এসেছে যে, ‘আমি ঐ ব্যক্তি হতে দায়িত্ব মুক্ত, যে ব্যক্তি শোকে মাথা মুন্ডন করে, উচ্চৈঃস্বরে কাঁদে ও কাপড় ছিঁড়ে’।[বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১৭২৬।] অধিকন্তু ঐসব শোক সভা বা শোক মিছিলে বাড়াবাড়ি করে সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তার পার্থক্য মিটিয়ে দিয়ে হোসাইন (রাঃ) এর কবরে রূহের আগমন কল্পনা করা, সেখানে সিজদা করা, মাথা ঝুঁকানো, প্রার্থনা নিবেদন করা ইত্যাদি পরিষ্কারভাবে শির্ক।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের কে উপরে উল্লেখিত ইসলামের গর্হিত কাজগুলো বর্জন করার তাওফিক দান করুক এবং এই মহাররম মাসে যে সমস্ত আমল সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণীত সে সমস্ত আমল করার তাওফিক দান করুক আমীন।