মুহাররম মাসের ছওম
মুহাররম, হিজরি সনের প্রথম মাস।মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন যে চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন তম্মধ্যে অন্যতম মাস হচ্ছে মুহাররম।এই মাসটি বরকতময় মাস। এ মাসে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অধিক পরিমাণে নফল ছিয়াম এর কথা বলেছেন। তিনি (সাঃ) বলেন,
أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلَاةُ اللَّيْلِ
অর্থাৎ, “রমাদানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম ছওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের ছওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত”।[সহিহ মুসলিম]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, ফরয সালাতসমূহের পর কোন ছলাত এবং রমাদান মাসের সিয়ামের পর কোন ছওম সর্বোত্তম? বললেন, ফরয সালাতসমূহের পর গভীর রাতের ছলাত সর্বোত্তম এবং রমাদান মাসের সিয়ামের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের ছওম সর্বোত্তম”।[সহিহ মুসলিম]
এ মাসের মধ্যে এমন একটি দিন আছে যাকে ‘আশুরার দিন’ বলা হয়। যে দিনটিতে ছওম রাখলে বিগত এক বছরের পাপরাশি মোচন হয়। (মুসলিম)
আশুরার ছওম
আশুরা অর্থ : আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশের’ (দশম) শব্দ থেকে এসেছে। ‘আশের’ হচ্ছে ‘আশারা’ (দশ) শব্দের বিশেষণ। অতএব আশুরা অর্থ হচ্ছে দশম বা দশক সেহেতু মুহাররম মাসের ১০ম দিবসকে আশুরা বলা হয়। (লিসানুল আরব, ৪/৫৬৯) ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন-নবী করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) যখন মক্কা হতে মদিনা শরীফে হিজরত করে মদিনা শরীফে তাশরীফ নিয়ে ছিলেন,তখন মদিনার ইহুদীদেরকে আশুরার ছওম রাখতে দেখে তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা আশুরার ছওম কেন রাখ? উত্তরে তারা বলল, এ দিনটা অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানিত, কেননা এই দিনে আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাইলদেরকে তাদের শত্রু ফেরাউন হতে পরিত্রান দিয়ে ছিলেন। এ কারনে আমরা ছওম এর মাধ্যমে ঈদ বা খুশি পালন করি, যেন তার স্মরন সব সময় বিদ্যমান থাকে।হুজুর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)বললেন,হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম) এর বিজয়ের দিন পালনে আমরা তোমাদের থেকে বেশি অধিকারী।অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) নিজে ছওম রাখলেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে ছওম রাখার নির্দেশ দিলেন।[বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ ]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ মুহাররম ছওম রেখেছেন। কিন্তু ইহূদী ও নাছারারা শুধুমাত্র ১০ই মুহাররমকে সম্মান করত এবং ছওম পালন করত। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরোধিতা করার জন্য ঐ দিনসহ তার পূর্বের অথবা পরের দিন ছওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব সুন্নাত হ’ল, ৯ ও ১০ই মুহাররম অথবা ১০ ও ১১ই মুহাররমে ছওম পালন করা। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
حِيْنَ صَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى. فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّىَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আশূরার ছওম পালন করলেন এবং ছওম পালনের নির্দেশ দিলেন, তখন ছাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইহূদী ও নাছারাগণ এই দিনটিকে (১০ই মুহাররম) সম্মান করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আগামী বছর বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ই মুহাররম সহ ছওম রাখব’। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররম আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়ে যায়। [মুসলিম]
আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, و صِيَامُ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ
অর্থঃ ‘আশুরা বা ১০ই মুহাররমের সিয়াম আমি আশা করি আল্লাহর নিকটে বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গোনাহের কাফফারা হিসাবে গণ্য হবে’।
[মুসলিম, মিশকাত ]