সোমবার ও বৃহস্পতিবার এর ছওম
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ছওম।রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) সপ্তাহে সোম বার ও বৃহস্পতি বার ছওম পালন করতেন।
এ বিষয়ে ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবারের ছওমের প্রতি খুবই খেয়াল রাখতেন”।[তিরমিযী]
অন্য হাদিসে আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সোমবারের ছওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ঐ দিন আমার জন্ম হয়েছে এবং ঐ দিন আমার ওপর (কুরআন) নাযিল হয়েছে”।[সহীহ মুসলিম]
আল্লর রাসূল (সাঃ) অধিকাংশ সময় প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছওম রাখার আরও একটি অন্যতম কারণ নিম্নের হাদিসগূলো থেকে আমরা জানতে পারি
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবারে (আল্লাহর দরবারে বান্দার) ‘আমাল পেশ করা হয়। তাই আমি চাই আমার ‘আমাল পেশ করার সময় আমি ছওম অবস্থায় থাকি। (তিরমিযী)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছওম রাখতেন। তাঁর কাছে জিজ্ঞাস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! (সাঃ) আপনি অধিকাংশ সময়ই সোম ও বৃহস্পতিবার ছওম রাখেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সোম ও বৃহস্পতিবার হলো ঐ দিন, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলিমকে মাফ করে দেন। কিন্তু ওদেরকে মাফ করে দেন না যারা সম্পর্কচ্ছেদ করে রাখে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)-কে (ফেরেশতাগণকে) বলেন, ওদেরকে ছেড়ে দাও যে পর্যন্ত তারা পরস্পর সম্পর্ক ঠিক করে নেয় (এরপর তাদেরকে মাফ করে দেয়া হবে)। (আহমদ, ইবনু মাজাহ)
আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন আমাদের সকল কে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার ছওম রাখার তওফিক দান করেন আমীন।
শুক্রবারের ছওম
শুক্রবার মূলত সাপ্তাহিক ঈদের দিন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এটি সপ্তাহের ঈদের দিন, মুসলমানদের জন্য একটা মর্যাদাপূর্ণ দিন।’
তাই শুধুমাত্র এই দিনটিতে নফল ছওম পালন করাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) নিষেধ করেছেন।তবে যদি কেউ বৃহস্পতি ও শুক্রবার অথবা শুক্র ও শনিবার এইভাবে ছওম পালন করে থাকে অথবা আইয়ামে বীয (প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারখ) এর ছওম যদি কেউ পালন করে থাকে এবং সেটি শুক্রবারে পড়ে যায় তাহলে কোনো সমস্যা নেই । কিন্তু শুধুমাত্র শুক্র বারের জন্য নির্দিষ্ট করে ছওম পালন করা, এটি হাদিসে নিষেধ এসেছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে,
لاَ يَصُومَنَّ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الجُمُعَةِ، إِلَّا يَوْمًا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ
অর্থঃ তোমাদের কেউ যেন শুধু জুমু‘আর দিনে সাওম পালন না করে,তার (জুমু‘আর) আগে একদিন বা পরের দিন ব্যতীত। [সহীহ বুখারী,সহীহ মুসলিম ]
জুয়াইরিয়া বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، دَخَلَ عَلَيْهَا يَوْمَ الجُمُعَةِ وَهِيَ صَائِمَةٌ، فَقَالَ: أَصُمْتِ أَمْسِ؟ قَالَتْ: لاَ، قَالَ: تُرِيدِينَ أَنْ تَصُومِي غَدًا؟ قَالَتْ: لاَ، قَالَ: فَأَفْطِرِي، وَقَالَ حَمَّادُ بْنُ الجَعْدِ: سَمِعَ قَتَادَةَ، حَدَّثَنِي أَبُو أَيُّوبَ، أَنَّ جُوَيْرِيَةَ، حَدَّثَتْهُ: فَأَمَرَهَا فَأَفْطَرَتْ
অর্থঃ (সাঃ) জুমু‘আর দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করেন তখন তিনি (জুযাইরিয়া) সাওম পালনরত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি গতকাল সাওম পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি আগামীকাল সাওম পালনের ইচ্ছা রাখ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে সাওম ভেঙ্গে ফেল। হাম্মাদ ইবনুল জা‘দ রহ. স্বীয় সূত্রে জুয়াইরিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আদেশ দেন এবং তিনি সাওম ভঙ্গ করেন।[ সহীহ বুখারী ]
মুহাম্মদ ইবন ‘আব্বাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে,
نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الجُمُعَةِ؟ قَالَ: نَعَمْ، زَادَ غَيْرُ أَبِي عَاصِمٍ، يَعْنِي: أَنْ يَنْفَرِدَ بِصَوْمٍ
অর্থঃ (সাঃ) কি জুমু‘আর দিনে (নফল) সাওম পালন করতে নিষেধ করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবু ‘আসিম রহ. ব্যতীত অন্যেরা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, পৃথকভাবে জুমু‘আর দিনের সাওম পালনকে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]