আ’রাফাহ্ দিনের ছওম এর ফজিলত
যারা হাজ্জ্বে যাননি তাদের জন্য আ’রাফাহ্র দিন ছওম রাখা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আ’রাফাহ্র দিনে ছওম এর ব্যাপারে বলেছেন: “আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, এটি পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হবে।” (মুসলিম)
আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আ’রাফাহ্র দিনে ছওম রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়। ( মুসলিম ২৮০৪, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ )
ইয়াওমুল আ’রাফাহ্ এর পরিচয়
জিলহাজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখকে (ঈদুল আযহার আগের দিন) ‘ইওয়ামুল আ’রাফাহ্ ’ বা ‘ আ’রাফাহ্ দিন’ বলা হয়,কারণ এই দিনে হাজিরা আরাফাহ্র ময়দানে একত্রিত হন। হাজ্জ্বের সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ আহকাম হলো যিলহাজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখ ‘আরাফার ময়দানে’ অবস্থান করা। এই দিনের গুরুত্ত্ব সম্পর্ক রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,“ আ’রাফাহ্ ময়দানে অবস্থান করাই হলো হাজ্জ্ব।”
আ’রাফাহ্র ছওম কোনদিন রাখব?
ইয়াওমুল আ’রাফাহ্র ছওম কি সৌদিআরবের সাথে মিলিয়ে রাখব নাকি ৯ ই যিলহাজ্জ্ব রাখব?
ইয়াওমুল আ’রাফাহ্ ৯ ই যিলহাজ্জ্বে অনুস্ঠিত হয়। কিন্তু ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ইসলামিক ক্যলেন্ডারের তারিখ সব দেশে এক হয় না। যেমন বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার এর মাঝে ১ দিন অথবা ২দিনের ব্যবধান হয়ে থাকে তাই আমরা কোন দিন আরাফাহ্ এর ছওম পালন করবো তা নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হয়। আসলে এই বিষয় নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় এর কিছু নেই কেননা রসূলুল্লাহ্ (সঃ) হাদিসে ৯ই যিলহজ্জ্ব এর কথা উল্লেখ করেন নাই বরং তিনি (সঃ) “ইয়াওমুল আ’রাফাহ্”(আ’রাফাহ্র দিন) বলে উল্লেখ করেছেন। আর উকুফে আ’রাফাহ্ হজ্জ্বের সাথে সম্পৃক্ত। তাই হাজিগণ যে দিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করবেন (সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৯ই যিল হাজ্জ্ব) সেই দিনই ছওম পালন করা অধিকাংশ আলেমদের অভিমত। এ বছর ইয়াওমে ‘আরাফা হচ্ছে ৮ ই জুলাই শুক্রবার। আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে আরাফার দিন ছওম রাখার তৌফিক দান করেন। আ-মী-ন।
আরাফাহ্র দিনে দুআ'
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “শ্রেষ্ঠ দুআ’ হচ্ছে আরাফাহ্ দিনের দুআ’। আর আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছি তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে:
لَا اِلٰهِ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হাম্দু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বদীর।
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।[তিরমিযী নং ৩৫৮৫; আর শাইখুল আলবানী সহীহুত তিরমিযীতে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে আ’রাফাহ্র দিন বেশি বেশি দুআ’ করার তৌফিক দান করেন। আ-মী-ন।
তাকবীরে তাশরীক
তাকবীর শব্দের অর্থ হলো- বড়ত্ব ঘোষণা করা। আর তাশরীক শব্দের অর্থ হলো- সূর্যের আলোতে রেখে গোশত শুকানো। আরবগণ তাদের কুরবানীর গোশত ঈদের তিনদিন পর পর্যন্ত রোদে দিয়ে শুকাতো, এজন্য এ দিনগুলো আইয়ামে তাশরীক বলা হয়। তাকবীরে তাশরীক হলো নিম্নের তাকবিরটি বলা।
اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ لَااِلٰهِ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।’
অর্থ : ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।’
তাকবীর পড়ার নিয়মঃ জিলহজের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয সালাতের পর প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ, মুকিম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী সবার জন্য একাকি কিংবা জামাআতে সালত আদায় করার পর একবার তাকবিরে তাশরিক আওয়াজ করে পাঠ করা করা আবশ্যক তবে মেয়েরা নিম্ন-স্বরে তাকবীর পাঠ করবেন।