ঈমান এর শাব্দিক অর্থঃ
ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সত্যায়ন করা, বিশ্বাস করা।
ঈমান এর পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ
আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় অন্তরের বিশ্বাস, জবানের স্বীকারোক্তি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে আমল করাকে ঈমান বলা হয়।
ঈমানের রুকনসমূহঃ
আল্লাহর প্রতি, আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাদের প্রতি, আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের প্রতি, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান দিবসের প্রতি এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এই ছয়টি হচ্ছে ঈমানের রুকন। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতে যেই সঠিক পদ্ধতিতে এই ছয়টি রুকনের বর্ণনা এসেছে, একসাথে সেই রুকনগুলোর প্রতি বিশ্বাস না করলে কারো ঈমান বিশুদ্ধ হবেনা। এই রুকনগুলো হচ্ছে,
الإيمان بالله আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসঃ
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হলো অন্তর দিয়ে আল্লাহর উপর এই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, তিনিই প্রত্যেক জিনিষের একমাত্র রব ও মালিক। তিনি সিফাতে কামালিয়া বা সর্বোত্তম ও পরিপূর্ণ গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত এবং প্রত্যেক দোষ-ত্রূটি থেকে পবিত্র ও মুক্ত। সেই সাথে আরো বিশ্বাস করা যে, তিনিই একমাত্র বান্দার এবাদতের হকদার, এতে তাঁর কোন শরীক নেই এবং ইলম ও আমলের মাধ্যমে এর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকা।
الإيمان بالملائكة ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাসঃ
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়নের তাৎপর্য হলো, অন্তর দিয়ে তাদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস করা। আরো বিশ্বাস করা যে, তারা ঠিক সে রকমই, যেভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে তাদের বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা সুরা আন্বিয়ার ২৭ নং আয়াতে বলেনঃ
بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ
অর্থঃ ‘‘তারা তো মর্যাদাশীল বান্দা ৷ তারা তাঁর সামনে অগ্রবর্তী হয়ে কথা বলেনা এবং শুধু তাঁর হুকুমেই কাজ করে’’। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতা ও তাদের বিভিন্ন গুণাবলীর বিবরণ দিয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, তাদের উপর অনেক কাজের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তারা সেই দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো পালন করে। এই সবের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক।
الإيمان بالكتب আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের প্রতি ঈমানঃ
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলদের উপর যেসব কিতাব নাযিল করেছেন, সেগুলোকে সত্যায়ন করা। আরো বিশ্বাস করা যে, কিতাবগুলোতে যা আছে, তা আল্লাহর কালাম। তা সত্য, আলোর দিশারী এবং তাতে রয়েছে মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট হেদায়াত।
الإيمان بالرسل রাসূলদের প্রতি ঈমানঃ
আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির হেদায়াত ও কল্যাণের জন্য যেসমস্ত নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের সকলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অন্যতম রুকন। তারা যে সমস্ত বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন তাতে তারা সত্যবাদী। তারা তাদের প্রভুর রেসালাত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আমরা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করিনা; বরং তাদের সকলের উপর ঈমান রাখি। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা যাদের নাম উল্লেখ করেছেন, তাদের প্রতি ঈমান রাখি এবং তাদের মধ্য হতে যাদের নাম উল্লেখ করেন নি তাদের সকলের প্রতি আমরা ঈমান রাখি। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلًا لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
অর্থঃ ‘‘আর নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট ইতিপূর্বে বহু রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করেছি এবং এমন আরো অনেক রাসূল রয়েছেন, যাদের কথা তোমাকে বলিনি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৪)
রাসূলদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন أولو العزم অর্থাৎ আল্লাহর দিকে দাওয়াত প্রচারে সুদৃঢ় ইচ্ছার অধিকারী রাসূলগণ। তারা হলেন নূহ(আঃ), ইবরাহীম(আঃ), মুসা(আঃ), ঈসা(আঃ) এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সম্মান ও মর্যাদার দিক দিয়ে তাদের পরে ছিলেন অন্যান্য রাসূলগণ। অতঃপর নবীগণ। নবী-রাসূলদের মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বশেষ হচ্ছেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তারা ছিলেন ঐ সমস্ত রাসূল, যারা রেসালাতের দায়িত্ব পালনে ছিলেন পর্বত সদৃশ সুদৃঢ় ইচ্ছা শক্তি সম্পন্ন এবং আল্লাহর তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করতে গিয়ে নিজ নিজ গোত্রের পক্ষ হতে যেসব যুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন তাতে সীমাহীন ধৈর্যধারনকারী।
الإيمان بالبعث পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমানঃ
এর অর্থ হচ্ছে কিয়ামত দিবসে মৃতদেরকে তাদের কবর হতে জীবিত অবস্থায় বের করার প্রতি ঈমান আনয়ন করা। কবর হতে জীবিত অবস্থায় বের করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করবেন এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পবিত্র সুন্নাতে আমল অনুযায়ী তাদেরকে যে পদ্ধতিতে বিনিময় দেয়ার বর্ণনা দিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই তাদেরকে বিনিময় প্রদান করবেন।
الإيمان بالقدر خيره وشره তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করাঃ
তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করা অর্থ হচ্ছে তাকদীরের ভাল ও মন্দের উপর ঈমান আনয়ন করার অর্থ হচ্ছে, অন্তর দিয়ে এই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাআলা মাখলুক সৃষ্টি করার আগেই সমস্ত বস্তুর তাকদীরসমূহ এবং উহার সময়কাল সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক সৃষ্টির ভাগ্যে কী রয়েছে এবং তা সে কখন পাবে ? আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সৃষ্টি করার পূর্ব হতেই অবগত আছেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় ইলম মোতাবেক উহাকে লাওহে মাহফুযে লিখে দিয়েছেন। অতঃপর স্বীয় ক্ষমতা ও ইচ্ছা দ্বারা প্রত্যেক সৃষ্টিকে তার নির্ধারিত সময়ে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং ভাল-মন্দ প্রত্যেক সৃষ্টিই তাঁর ইলম, তাঁর নির্ধারণ, তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে। তাই আল্লাহ তাআলা যা চান, তা হয়। আর তিনি যা চান না, তা হয়না।