হাদীসঃ ইবনু আবূ আকীল আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমআ’র দিন গোসল করবে এবং স্ত্রীর সুগন্ধি ব্যবহার করবে (যদি নিজের না থাকে), অতঃপর উত্তম রূপে বস্ত্র পরিধান করে মসজিদে এসে অন্যের ঘাড় টপকিয়ে সামনে যাবে না এবং ইমামের খুতবা পাঠের সময় নিশ্চূপ থাকবে-তার এক জুমআ’ হতে অন্য জুমআ’ পর্যন্ত সমস্ত ছগীরা গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে। অপর পক্ষে যে ব্যক্তি জুমআ’ ছলাতের জন্য মসজিদে উপনীত হয়ে অপ্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্মে লিপ্ত হবে এবং মানুযের ঘাড় টপকে সামনে যাবে সে জুমআ’র ছলাতের ছওয়াব হতে বঞ্চিত হবে এবং) কেবলমাত্র যুহরের ছলাত আদায়ের সম-পরিমাণ ছওয়াব প্রাপ্ত হবে। ( আবু দাউদঃ ৩৪৭ )
হাদীসঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জুমআ’র সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়।
(ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না।
(খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুম’আয় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না।
(গ) তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুমআ’য় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুমআ’র মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদঃ ১১১৩)
হাদিসঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যাক্তি ভালভাবে পবিত্র হল অতঃপর মসজিদে এলো, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইল, তার জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী এ সাত দিনের সাথে আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুৎবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা বা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করল সে যেন অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিমঃ ৮৫৭)
পবিত্র জুমার দিনকে বলা হয় মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ এই দিনের কিছু সুন্নত রয়েছে। যেগুলো সকল মুসলমানকে পালনের চেষ্টা করাটা শ্রেয়। তাই এখনই জেনে নিন, জুমআ’র দিনের সুন্নতসমূহের বিবরণ।
জুমআ’র দিনের সুন্নতসমূহঃ
১। জুমআ’র দিন গোসল করা। যাদের উপর জুমআ’ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
২। জুমআ’ ছলাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা।(বুখারীঃ ৮৮০)
৩। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমআ’ আদায় করা।(ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা।(তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
৭। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)
৮। তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০।জুমআ’র দিন ফজরের ছলাতে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান (দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুমআ’ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমআ’ ছলাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)
১২। জুমআ’র দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৪। মুসুল্লীদের ফাঁকা করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০, ৮৮৩)
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ ছলাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)
১৮। জুমআ’র দিন জুমআ’র পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)
১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)
২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২৪। জুমআ’র দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুমআ’ মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৫। জুমআ’র আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয়।(বুখারীঃ ৯১২)
২৬। জুমআ’র ফরজ ছলাত আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)
২৭। উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুম’আ চালু না করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)
২৮। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় ছলাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)
২৯। ছলাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই ছলাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই ছলাতের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
৩০। কোন মুছল্লী সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুছল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)
৩১। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের ছলাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)
৩২। হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।
৩৩। খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)
৩৪। যেখানে জুমআ’র ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত ছলাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)
৩৫। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।