ইসলামে বিবাহের গুরুত্বও পদ্ধতি
মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তারজীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদামিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানবজীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসারন্যায় জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী বংশ বৃদ্ধির জন্য হাওয়া(আঃ)-কে সৃষ্টি করে আদম (আঃ)-এর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন। মানব জীবন প্রণালী পরিবর্তনের সাথে সাথে বিবাহের নিয়মেও পরিবর্তন ঘটেছে। অবশেষে শেষ নবীমুহাম্মাদ (ছাঃ) জাহেলী যুগের সকল কুসংস্কার দূর করে নারীদেরকে বিবাহের মাধ্যমে মর্যাদা দান করেছেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের মুসলমানগণ বিবাহের ইসলামী পদ্ধতি ভুলে অনেকটা বিধর্মীদের রসম-রেওয়াজের সাথে মিশে গেছে। আলোচ্য প্রবন্ধে বিবাহের গুরুত্ব ও নিয়ম-পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হল-
বিবাহের গুরুত্ব :
মহান আল্লাহ পৃথিবীর সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন (যারিয়াত ৫১/৪৯)। এমনকি লতা-পাতা,গাছ-পালাও (ইয়াসীন ৩৬/৩৬)। তেমনি মহান আল্লাহ মানুষকে নারী-পুরুষে বিভক্ত করেছেন (হুজুরাত৪৯/১৩, নিসা ৪/১) এবং একে অপরের প্রতি আকর্ষণীয় করে দিয়েছেন। ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন, বসবাস ও জৈবিক চাহিদাপূরণের একমাত্র পন্থা হিসাবে বিবাহের প্রচলন করাহয়েছে। এজন্য প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের অধীনস্থদের বিবাহের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়ে
আল্লাহ বলেন, ﻭَﺃَﻧْﻜِﺤُﻮﺍ ﺍﻟْﺄَﻳَﺎﻣَﻰ ﻣِﻨْﻜُﻢْﻭَﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴْﻦَ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻛُﻢْ ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্বামীহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও’ (নূর ২৪/৩২)।
বিবাহের মাধ্যমে মানুষ তার দৃষ্টিকে সংযত করে যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে জান্নাতের পথসুগম করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
ﻳَﺎﻣَﻌْﺸَﺮَ ﺍﻟﺸَّﺒَﺎﺏِ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﻣِﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟْﺒَﺎﺀَﺓَ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺰَﻭَّﺝْ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُﺃَﻏَﺾُّ ﻟِﻠْﺒَﺼَﺮِ ﻭَﺃَﺣْﺼَﻦُ ﻟِﻠْﻔَﺮْﺝِ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻭِﺟَﺎﺀٌ
অর্থঃ ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী,যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন ছিয়াম পালন করে। কেননা ছিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম’।[১]
অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
ﺗَﺰَﻭَّﺟُﻮﺍ ﺍﻟْﻮَﺩُﻭْﺩَ ﺍﻟْﻮَﻟُﻮْﺩَ ﻓَﺈِﻧِّﻰْ ﻣُﻜَﺎﺛِﺮٌ ﺑِﻜُﻢُ ﺍﻷُﻣَﻢَ
অর্থঃ ‘তোমরা স্নেহপরায়ণ বেশী সন্তান জন্ম দানকারিণীকে বিবাহ কর। কেননা আমি বেশী উম্মত নিয়ে(ক্বিয়ামতের দিন) গর্ব করব’।[২]
বিবাহ করা সমস্ত নবীদের সুন্নাত। আল্লাহবলেন,
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺭُﺳُﻼً ﻣِّﻦ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟﺎًﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺔً
অর্থাৎ ‘তোমার পূর্বে আমরা অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদিয়েছিলাম’ (রা‘দ ১৩/৩৮)।
রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের নিকট আগত তিন ব্যক্তির এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করার স্বার্থে বিবাহ না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
ﻭَﺃَﺗَﺰَﻭَّﺝُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ، ﻓَﻤَﻦْ ﺭَﻏِﺐَ ﻋَﻦْﺳُﻨَّﺘِﻰْ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨِّﻰْ
অর্থাৎ ‘আমি নারীদেরকে বিবাহ করি(সুতরাং বিবাহ করা আমার সুন্নাত)। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়’। [৩]
বিবাহ না করে চিরকুমার ও নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের অনুমতি ইসলামে নেই। সা‘আদ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ(রাঃ) বলেন,
ﺭَﺩَّ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋَﻠَﻰﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺑْﻦِ ﻣَﻈْﻌُﻮْﻥٍ ﺍﻟﺘَّﺒَﺘُّﻞَ، ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﺫِﻥَ ﻟَﻪُ ﻻَﺧْﺘَﺼَﻴْﻨَﺎ
অর্থাৎ ‘রাসূল(ছাঃ) ওছমান ইবনু মাযঊনকে নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের অনুমতি দেননি। তাকে অনুমতি দিলে আমরা নির্বীর্যহয়ে যেতাম’। [৪]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাসূল(ছাঃ) নিঃসঙ্গ জীবন যাপনকে নিষেধ করেছেন’। [৫]
স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে বিবাহ না করার অনেক অপকারিতা রয়েছে। প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদ আল্লামা নাফীসী বলেছেন, ‘শুক্র প্রবল হয়ে পড়লে অনেক সময় তা অত্যন্ত বিষাক্ত প্রকৃতি ধারণ করে। মন ও মগজের দিকে তা এক প্রকার অত্যন্ত খারাপ বিষাক্ত বাষ্প উত্থিত করে, যার ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়া বা মৃগী রোগ প্রভৃতি ধরনের ব্যাধি সৃষ্টি হয়’। [৬]
শাহ্ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী স্বীয় বিখ্যাতগ্রন্থ হুজ্জতুল্লাহিল বালিগাহতে বলেছেন,‘জেনে রাখ, শুক্রের প্রজনন ক্ষমতা যখন দেহে খুব বেশী হয়ে যায়, তখন তা বের হতে না পারলে মগজে তার বাষ্প উত্থিত হয়’। [৭]
বিবাহের মাধ্যমে বংশের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়। মানুষ তার জৈবিক চাহিদা বিবাহ ব্যতীতও মিটাতে পারে; কিন্তু ইসলামে তা অবৈধ, হারাম। পক্ষান্তরে বিবাহের ব্যবস্থা না থাকলে বংশীয় ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মানুষের পরিচয় বিলীন হয়ে যাবে, একে অপরের প্রতি দয়া-মায়া কমে যাবে, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যাবে। অনেকে দরিদ্র হওয়ার কারণে স্ত্রী-সন্তান লালন-পালন না করতে পারার ভয়ে বিবাহ করে না। অথচ আল্লাহ বিবাহের কারণে দরিদ্রকে সম্পদশালী করে থাকেন।
আল্লাহ বলেন,
ﺇِﻥْ ﻳَﻜُﻮْﻧُﻮْﺍ ﻓُﻘَﺮَﺍﺀﻳُﻐْﻨِﻬِﻢُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻪِ
অর্থঃ ‘যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে সম্পদশালী করে দিবেন’ (নূর ২৪/৩২)।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল(ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের উপর আল্লাহর সাহায্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে- (১) যে দাস নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায়। (২) যে লোক বিবাহ করে নিজের নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করতে চায়। (৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে যেতে চায়’। [৮]
স্বামী-স্ত্রীর বিবাহের বন্ধন আল্লাহরনিদর্শনাবলীর অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ বলেন,
ﻭَﻣِﻦْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﺃَﻥْ ﺧَﻠَﻖَ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦْ ﺃَﻧﻔُﺴِﻜُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟﺎً ﻟِّﺘَﺴْﻜُﻨُﻮْﺍﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢ ﻣَّﻮَﺩَّﺓً ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً
অর্থঃ আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিণীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া দান করেন’ (রূম ৩০/২১)।
বিবাহের মাধ্যমেই সতীত্বও চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা যায়। আল্লাহ বলেন, ।
ﻫُﻦَّ ﻟِﺒَﺎﺱٌ ﻟَّﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻟِﺒَﺎﺱٌ ﻟَّﻬُﻦَّ
অর্থঃ স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোষাক স্বরূপ, আর তোমরা তাদের জন্য পোষাক স্বরূপ’ (বাক্বারাহ ২/১৮৭)।
যে সমাজে বিবাহ ব্যতীত অবাধে নারী-পুরুষের মেলামেশা চলে সেখানে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয় এবং বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। পরিশেষে অবৈধ মেলামেশার কারণে পরকালে এরা জাহান্নামের কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে। বিবাহ করা দ্বীনের পূর্ণতা অর্জনের পরিচায়ক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করল,তখন সে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল’। [৯]
সুতরাং বিবাহ না করলে ব্যক্তি গোনাহগার না হলেও এতে শরীআতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানকে অগ্রাহ্য করা হয়। বিবাহের হুকুম :অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিবাহের হুকুম ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন-
১. ওয়াজিব : যার শারীরিক শক্তিমত্তা, সক্ষমতা ও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে এবং যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ ও পদস্খলনের আশংকা করে, তার জন্য বিবাহ করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন,
ﻭَﻟْﻴَﺴْﺘَﻌْﻔِﻒِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﺎﻳَﺠِﺪُﻭﻥَ ﻧِﻜَﺎﺣﺎً ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻐْﻨِﻴَﻬُﻢْ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦ ﻓَﻀْﻠِﻪِ
অর্থঃ ‘যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাব মুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে’ (নূর ২৪/৩৩)।
অর্থঃ কেননা আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং হারাম থেকে মুক্ত থাকা ওয়াজিব, যা বিবাহ ব্যতীত সম্ভব নয়’ (নূর ৩৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)বলেন,
ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﻏَﺾُّ ﻟِﻠْﺒَﺼَﺮِ ﻭَﺃَﺣْﺼَﻦُ ﻟِﻠْﻔَﺮْﺝِ
অর্থঃ ‘কেননা এটা চোখ অবনমিত রাখে ও লজ্জাস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করে’। [১০]
২. মুস্তাহাব : যার শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে এবং নিজেকে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে নিরাপদ রাখার ক্ষমতা আছে, তার জন্য বিবাহ করা মুস্তাহাব।তবে একাকী জীবন-যাপনের চেয়ে বিবাহ করা উত্তম। কেননা ইসলামে সন্ন্যাসব্রত বা বৈরাগ্য নেই। [১১]
৩. হারাম : যার দৈহিক মিলনের সক্ষমতা ও স্ত্রীরভরণ-পোষণের সামর্থ্য নেই তার জন্য বিবাহ করা হারাম। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৩১)। অনুরূপভাবে যিনিযুদ্ধের ময়দানে বা কাফির-মুশরিক দেশে যুদ্ধরত থাকেন তার জন্য বিবাহ হারাম। কেননা সেখানে তার পরিবারের নিরাপত্তা থাকে না। তদ্রূপ কোন ব্যক্তির স্ত্রী থাকলে এবং অন্য স্ত্রীর মাঝে ইনছাফ করতে না পারার আশংকা করলে দ্বিতীয় বিবাহ করা হারাম।
যেমন আল্লাহ বলেন,
ﻓَﺈِﻥْ ﺧِﻔْﺘُﻢْ ﺃَﻻَّ ﺗَﻌْﺪِﻟُﻮﺍْﻓَﻮَﺍﺣِﺪَﺓً ﺃَﻭْ ﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻜُﻢْ
অর্থঃ ‘আর যদি আশংকা কর যে,সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে’ (নিসা ৪/৩)।[১২]
বিবাহের শর্তাবলী ও রুকন :
বিবাহের শর্ত হল চারটি।
(১) পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন (২) উভয়ের সম্মতি।[১৩] (৩) মেয়ের ওলী থাকা।[১৪] (৪) দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা। [১৫]
বিবাহের দু’টি রুকন হল ঈজাব ওকবূল (নিসা ১৯)। উক্ত শর্তাবলীর কোন একটি পূরণনা হলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। উল্লেখ্য যে, যে মেয়ের ওলী নেই, তার ওলী হবেন সরকার।[১৬]
বিবাহের নিয়ম-পদ্ধতি :
ইসলামের প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। বিবাহ তার ব্যতিক্রম নয়। বিবাহের সংক্ষিপ্ত নিয়ম হল-উপযুক্ত বয়সের ছেলে-মেয়েকে তাদের অভিভাবক বিবাহের প্রস্তাব দিবেন। সম্ভব হলে ছেলে-মেয়ে একে অপরকে দেখে তাদের অভিমত জানাবে। উভয়ে একমত হলে নির্দিষ্ট দিনে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মেয়ের অভিভাবক নির্দিষ্ট মহরের বিনিময়ে ছেলের সাথে মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দিবেন। ছেলে কবুল বলে গ্রহণ করবে। যাকে আরবীতে ঈজাব ও কবূল বলা হয়। নিম্নে দলীলসহ বিবাহের বিস্তারিত নিয়ম উল্লেখ করা হল –
(১) নিয়ত শুদ্ধ করা : বিবাহের আগে বর-কনের উচিত নিয়ত ঠিক করা। নিজেকে খারাপ কাজ থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই বিবাহ করতে হবে। তাহলে উভয়েই ছওয়াব লাভ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,ﻭَﻓِﻰْ ﺑُﻀْﻊِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ
ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺃَﻳَﺄْﺗِﻰﺃَﺣَﺪُﻧَﺎ ﺷَﻬْﻮَﺗَﻪُ ﻭَﻳَﻜُﻮْﻥُ ﻟَﻪُ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺃَﺟْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺭَﺃَﻳْﺘُﻢْ ﻟَﻮْ ﻭَﺿَﻌَﻬَﺎﻓِﻰْ ﺣَﺮَﺍﻡٍ ﺃَﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻭِﺯْﺭٌ ﻓَﻜَﺬَﻟِﻚَ ﺇِﺫَﺍ ﻭَﺿَﻌَﻬَﺎ ﻓِﻰﺍﻟْﺤَﻼَﻝِ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ .
অর্থঃ ‘তোমাদের সবার স্ত্রীর যোনিতেও রয়েছে ছাদাক্বা। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ছাঃ)! আমাদের কেউ কি তার জৈবিক চাহিদা মেটাবে এবং এজন্য সে নেকী লাভ করবে ? তিনি বললেন, তোমাদের কি মনে হয়, যদি সে ঐ চাহিদা হারাম উপায়ে মেটাতো তাহলে তার কোন গুনাহ হত না ? (অবশ্যই হত)। অতএব সে যখন তা হালাল উপায়ে মেটায়, তার জন্য নেকী লেখা হয়’।[১৭]
(২) পাত্র-পাত্রীর সম্মতি : বিবাহের মূল হল পাত্র-পাত্রী বা বর-কনে। যারা সারা জীবন একসাথে ঘর-সংসার করবে। সে কারণ বিবাহের পূর্বে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই কোন ছেলে-মেয়েকে তার অসম্মতিতে বিবাহ করতে বাধ্য উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮْﺍ ﻻَﻳَﺤِﻞُّ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻥ ﺗَﺮِﺛُﻮْﺍ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﻛَﺮْﻫﺎً ‘হে ঈমানদারগণ!তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে, তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে’ (নিসা ৪/১৯)।
নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
ﻻَ ﺗُﻨْﻜَﺢُ ﺍﻷَﻳِّﻢُ ﺣَﺘَّﻰﺗُﺴْﺘَﺄْﻣَﺮَ ﻭَﻻَ ﺗُﻨْﻜَﺢُ ﺍﻟْﺒِﻜْﺮُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﺴْﺘَﺄْﺫَﻥَ ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِﻭَﻛَﻴْﻒَ ﺇِﺫْﻧُﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻥْ ﺗَﺴْﻜُﺖَ
অর্থঃ ‘বিবাহিতা মেয়েকে তার পরামর্শ ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না এবং কুমারী মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, তার অনুমতি কিভাবে হবে ? উত্তরে তিনি বললেন, ‘চুপ থাকাই হচ্ছে তার অনুমতি’।[১৮]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
ﻭَﺍﻟْﺒِﻜْﺮُ ﺗُﺴْﺘَﺄْﺫَﻥُ ﻓِﻰْ ﻧَﻔْﺴِﻬَﺎﻭَﺇِﺫْﻧُﻬَﺎ ﺻُﻤَﺎﺗُﻬَﺎ
অর্থঃ ‘যুবতী-কুমারী মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে পিতাকে তার অনুমতি নিতে হবে। আর তার অনুমতি হচ্ছে চুপ থাকা’।[১৯]
কুমারী মেয়ে বিবাহের প্রস্তাব শুনার পর চুপ থাকলে তার সম্মতি আছে বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু বিধবা মহিলার ক্ষেত্রে সরাসরি সম্মতি নিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘বিধবা মেয়েরা নিজেদের ব্যাপারে ওলীর থেকে অধিক হকদার’।[২০]
এছাড়াও কোন মেয়েকে অভিভাবকতার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দিলে সে ইচ্ছা করলে বিবাহ বহাল রাখতে পারে, ইচ্ছা করলে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে’।[২১]
(৩) অভিভাবকের সম্মতি : ছেলে-মেয়ের সম্মতির পাশাপাশি অভিভাবকের সম্মতিরও প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি যরূরী। নবী করীম (ছাঃ)বলেন, ﻻَ ﻧِﻜَﺎﺡَ ﺇِﻻَّ ﺑِﻮَﻟِﻰٍّ ‘অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহনেই’।[২২]
তিনি (সঃ) আরো বলেন,
ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﻧُﻜِﺤَﺖْ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺇِﺫْﻥِ ﻭَﻟِﻴِّﻬَﺎ ﻓَﻨِﻜَﺎﺣُﻬَﺎ ﺑَﺎﻃِﻞٌ ﻓَﻨِﻜَﺎﺣُﻬَﺎﺑَﺎﻃِﻞٌ ﻓَﻨِﻜَﺎﺣُﻬَﺎ ﺑَﺎﻃِﻞٌ ﻓَﺈِﻥْ ﺩَﺧَﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻠَﻬَﺎ ﺍﻟْﻤَﻬْﺮُ ﺑِﻤَﺎ ﺍﺳْﺘَﺤَﻞَّﻣِﻦْ ﻓَﺮْﺟِﻬَﺎ ﻓَﺈِﻥِ ﺍﺷْﺘَﺠَﺮُﻭْﺍ ﻓَﺎﻟﺴُّﻠْﻄَﺎﻥُ ﻭَﻟِﻰُّ ﻣَﻦْ ﻻَ ﻭَﻟِﻰَّ ﻟَﻪُ
অর্থঃ ‘যদি কোন নারী তার ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করে, তবে তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল। এইরূপ অবৈধ পন্থায় বিবাহিত নারীর সাথে সহবাস করলে তাকে মোহর দিতে হবে। কারণ স্বামী মোহরের বিনিময়ে তার লজ্জা স্থানকে ব্যবহার করেছে। যদি ওলীগণ বিবাদ করেন, তবে যার ওলী নেই তারওলী দেশের শাসক’।[২৩]
ছেলে-মেয়েকে লালন-পালনের পাশাপাশি অভিভাবকের অন্যতম দায়িত্ব হল যোগ্য স্থানে বিবাহের ব্যবস্থা করা। অভিভাবক হল প্রাপ্ত বয়স্কবুদ্ধি সম্পন্ন নিকটাত্মীয়-স্বজন। যেমন- পিতা, দাদা,ভাই, চাচা ইত্যাদি। তবে পিতার উপস্থিতিতে অন্য কেউ ওলী হতে পারবে না। অপর দিক কোন মহিলাও ওলী হতে পারে না।[২৪]
রাসূল (সাঃ) বলেন,
ﻻَﺗُﺰَﻭِّﺝُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﻭَﻻَ ﺗُﺰَﻭِّﺝُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻧَﻔْﺴَﻬَﺎ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻴَﺔَﻫِﻰَ ﺍﻟَّﺘِﻰ ﺗُﺰَﻭِّﺝُ ﻧَﻔْﺴَﻬَﺎ
অর্থঃ ‘কোন নারী কোন নারীর বিবাহ দিতে পারে না এবং কোন নারী নিজে বিবাহ করতে পারে না। কোন নারী নিজেই বিবাহ করলে সে ব্যভিচারী বলে গণ্য হবে’।[25] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈকা মহিলার অনুমতিবিহীন বিবাহকে প্রত্যাখ্যান করেন। [২৬]
(৪)পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সমতা : বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার আগে লক্ষ্য করতে হবে পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সমতা আছে কি-না। সম্পদ ও বংশ মর্যাদার সমতা হলে ভাল হয়, তবে জরূরী নয়। কিন্তু দ্বীনের বিষয়ে সমতা থাকা যরূরী।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘সাধারণতঃ মেয়েদের চারটি গুণ দেখে বিবাহ করা হয়- তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্ম। তোমরা ধার্মিক মেয়েকে অগ্রাধিকার দাও। অন্যথায় তোমাদের উভয় হস্ত অবশ্যই ধূলায় ধূসরিতহবে’। [২৭]
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ﻭَﺍﻧْﻜِﺤُﻮﺍ ﺍﻷَﻛْﻔَﺎﺀَ ﻭَﺃَﻧْﻜِﺤُﻮﺍﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ
অর্থঃ ‘তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং সমতা দেখে বিবাহ কর’। [২৮]
তবে বিবাহে সমতা হবে কেবল দ্বীন দারী ও চরিত্রের ক্ষেত্রে। যেমন আল্লামানাছীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,
ﻭﻟﻜﻦ ﻳﺠﺐ ﺃﻥﻧﻌﻠﻢ ﺃﻥ ﺍﻟﻜﻔﺎﺀﺓ ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﺍﻟﺨﻠﻖ ﻓﻘﻂ
অর্থঃ ‘তবে জানা আবশ্যক যে, সমতা হচ্ছে কেবল দ্বীনদারী ও চরিত্রের ক্ষেত্রে’। [২৯]
রাসূল(ছাঃ) বলেন,
ﻣَﻦْ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻥَ ﺩِﻳْﻨَﻪُ ﻭَﺧُﻠُﻘَﻪُ ﻓَﺰَﻭِّﺟُﻮْﻩُ
অর্থঃ ‘যার দ্বীনদারী এবং উত্তম আচরণে তোমরা সন্তুষ্ট,তার সাথে বিবাহ দাও’। [৩০]
(৫) বিবাহের প্রস্তাব :
বর অথবা কনে যে কোন এক পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসতে পারে। এমনকি বর সরাসরি কনেকে অথবা কনে সরাসরি বরকেও প্রস্তাব দিতে পারে। ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যখন ওমর (রাঃ)-এর কন্যা হাফছাহ (রাঃ) খুনায়স ইবনু হুযাইফা সাহমীর মৃত্যুতে বিধবা হলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একজন ছাহাবী ছিলেন এবং মদীনায় ইন্তেকাল করেন। ওমর (রাঃ)বলেন, আমি ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর কাছে গেলাম এবং হাফছাহকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দিলাম। তখন তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি। তারপর আমি কয়েক রাত অপেক্ষা করলাম। তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমার কাছে এটা প্রকাশ পেয়েছে যে, এখন আমি যেন তাকে বিবাহ না করি। ওমর (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আবু বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, যদি আপনি চান তাহলে আপনার সঙ্গে ওমরের কন্যা হাফছাহকে বিবাহ দেই। আবূবকর (রাঃ) নীরব থাকলেন, প্রতি-উত্তরে আমাকে কিছুই বললেন না। এতে আমি ওছমান (রাঃ)-এর চেয়ে অধিক অসন্তুষ্ট হলাম। এরপর আমি কয়েক রাত অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূল (ছাঃ) হাফছাহকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠালেন এবং হাফছাহকে আমি তাঁর সঙ্গে বিবাহ দিলাম’।[৩১]
অন্য এক হাদীছে এসেছে, আনাস (রাঃ)বলেন, একজন মহিলা নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে’? [৩২]
তবে বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার পূর্বে লক্ষ্য করতে হবে যে, এই মহিলাকে অন্য কেউ বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে কি-না ? যদি দিয়ে থাকে তাহলে নতুন করে প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নবীকরীম (ছাঃ) এক ভাই (ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে)দর-দাম করলে অন্যকে দরদাম করতে নিষেধ করেছেন এবং এক মুসলিম ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর অন্য ভাইকে প্রস্তাব দিতে নিষেধ করেছেন, যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব উঠিয়ে নেয় বা তাকে অনুমতি দেয়’। [৩৩]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,ﻭَﻻَ ﻳَﺨْﻄُﺐُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﺧِﻄْﺒَﺔِ ﺃَﺧِﻴﻪِ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﻜِﺢَ ﺃَﻭْﻳَﺘْﺮُﻙَ . ‘কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না করে, যতক্ষণ না সে বিবাহ করে অথবা ছেড়ে দেয়’। [৩৪]
যাদেরকে বিবাহ করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে তাদেরকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আল্লাহ নিম্নোক্ত মহিলাদেরকে হারাম করেছেন। তিনি বলেন,
ﺣُﺮِّﻣَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺃُﻣَّﻬَﺎﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺧَﻮَﺍﺗُﻜُﻢْ ﻭَﻋَﻤَّﺎﺗُﻜُﻢْﻭَﺧَﺎﻻَﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺑَﻨَﺎﺕُ ﺍﻷَﺥِ ﻭَﺑَﻨَﺎﺕُ ﺍﻷُﺧْﺖِ ﻭَﺃُﻣَّﻬَﺎﺗُﻜُﻢُ ﺍﻟﻼَّﺗِﻲﺃَﺭْﺿَﻌْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺧَﻮَﺍﺗُﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺮَّﺿَﺎﻋَﺔِ ﻭَﺃُﻣَّﻬَﺎﺕُ ﻧِﺴَﺂﺋِﻜُﻢْﻭَﺭَﺑَﺎﺋِﺒُﻜُﻢُ ﺍﻟﻼَّﺗِﻲ ﻓِﻲ ﺣُﺠُﻮﺭِﻛُﻢ ﻣِّﻦ ﻧِّﺴَﺂﺋِﻜُﻢُ ﺍﻟﻼَّﺗِﻲ ﺩَﺧَﻠْﺘُﻢﺑِﻬِﻦَّ ﻓَﺈِﻥ ﻟَّﻢْ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍْ ﺩَﺧَﻠْﺘُﻢ ﺑِﻬِﻦَّ ﻓَﻼَ ﺟُﻨَﺎﺡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺣَﻼَﺋِﻞُﺃَﺑْﻨَﺎﺋِﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﻼَﺑِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺠْﻤَﻌُﻮﺍْ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻷُﺧْﺘَﻴْﻦِ ﺇَﻻَّﻣَﺎ ﻗَﺪْ ﺳَﻠَﻒَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﻔُﻮﺭﺍً ﺭَّﺣِﻴْﻤﺎً
অর্থঃ ‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনী,তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্য পান করিয়েছে, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। তোমাদের ঔরষজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোন একত্রে বিবাহ করা, কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল,দয়ালু’ (নিসা ৪/২৩)। [৩৫]
(৬) পাত্র-পাত্রী দর্শন :
বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে দেখে নেওয়া উচিত। আল্লাহ বলেন,
ﻓَﺎﻧْﻜِﺤُﻮﺍْ ﻣَﺎ ﻃَﺎﺏَ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ
অর্থঃ ‘তোমরা বিবাহ কর সেই স্ত্রীলোক, যাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে’ (নিসা ৪/৩)।
মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাকে বললেন,
ﻫَﻞْ ﻧَﻈَﺮْﺕ ﺇﻟَﻴْﻬَﺎ؟ ﻗُﻠْﺖُ : ﻻَ، ﻗَﺎﻝَﻓَﺎﻧْﻈُﺮْ ﺇﻟَﻴْﻬَﺎ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﺣْﺮَﻯ ﺃَﻥْ ﻳُﺆْﺩَﻡَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻤَﺎ
অর্থঃ ‘তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসা জন্মাবে’। [৩৬]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একজন লোক নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল যে, সে আনছারী একটি মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন,
ﻫَﻞْ ﻧَﻈَﺮْﺕَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻥَّﻓِﻰْ ﻋُﻴُﻮْﻥِ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﺷَﻴْﺌًﺎ
অর্থঃ ‘তাকে দেখেছ কি ? কেননা আনছারদের লোকের চোখে দোষ থাকে’। [৩৭]
পাত্রী দর্শনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০/১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ীতে যায়। তারা পাত্রীকে সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে,দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখার যে পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে, তা ইসলাম সম্মত নয়। বিবাহের পূর্বে পাত্র ব্যতীত অন্যদের এভাবে পাত্রী দেখা চোখের জিনার শামিল। অনেক সময় পাত্র-পাত্রীর ধর্মীয় বিষয়কে না দেখে তার রূপ-লাবণ্য, বংশ ও সম্পদ দেখেই বিবাহের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম পাত্রের উচিত রূপ, বংশ ও সম্পদের চেয়ে পাত্রীর দ্বীনদারীকে বেশী গুরুত্ব দেয়া। পরিপূর্ণ দ্বীনদারী পাওয়া গেলে অন্য গুণ কম হলেও দ্বীনদার মহিলাকেই বিবাহ করা উচিত, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ﺗُﻨْﻜَﺢُﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻷَﺭْﺑَﻊٍ ﻟِﻤَﺎﻟِﻬَﺎ ﻭَﻟِﺤَﺴَﺒِﻬَﺎ ﻭَﺟَﻤَﺎﻟِﻬَﺎ ﻭَﻟِﺪِﻳْﻨِﻬَﺎ، ﻓَﺎﻇْﻔَﺮْﺑِﺬَﺍﺕِ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦِ ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﺪَﺍﻙَ
অর্থঃ ‘মেয়েদের চারটি গুণ বিবেচনা করে বিবাহ করা হয়; তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ ও সৌন্দর্য এবং তার দ্বীনদারী। কিন্তু তুমি দ্বীনদার মহিলাকেই প্রাধান্য দাও। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।[৩৮]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ)বলেছেন,
ﺇِﺫَﺍ ﺧَﻄَﺐَ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻥَ ﺩِﻳﻨَﻪُ ﻭَﺧُﻠُﻘَﻪُﻓَﺰَﻭِّﺟُﻮْﻩُ ﺇِﻻَّ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮْﺍ ﺗَﻜُﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻭَﻓَﺴَﺎﺩٌ ﻋَﺮِﻳْﺾٌ
অর্থঃ ‘যখন তোমাদের নিকট কোন বর বিবাহের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারী ও চরিত্রকে পছন্দ কর,তাহলে তার সাথে বিবাহ সম্পন্ন কর। অন্যথা যমীনে বড় বিপদ দেখা দিবে এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে’।[৩৯]
এছাড়া দেখার নাম করে আমাদের সমাজে ছেলে-মেয়ের একসাথে একাকী সময় কাটানো, পার্কে বসে বসে আলাপ করা, হবু বধুকে নিয়ে নির্জনে চলে যাওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নবী করীম(ছাঃ) বলেন,
ﻻَ ﻳَﺨْﻠُﻮَﻥَّ ﺭَﺟُﻞٌ ﺑِﺎﻣْﺮَﺃَﺓٍ، ﻭَﻻَ ﺗُﺴَﺎﻓِﺮَﻥَّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌﺇِﻻَّ ﻭَﻣَﻌَﻬَﺎ ﻣَﺤْﺮَﻡٌ
অর্থঃ ‘কোন পুরুষ যেন অপর মহিলার সঙ্গে নিভৃতে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ছাড়া সফর না করে’।[৪০]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন পুরুষ-মহিলা নির্জনে একত্রিত হয়, তখন তৃতীয়জন হিসাবে সেখানে শয়তান উপস্থিত হয়’।[৪১]
(৭) সাক্ষী :
বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ন্যায়পরায়ণ ঈমানদার দুজন সাক্ষী থাকবে। সাক্ষীগণ মহরের পরিমাণ ও বরের স্বীকারোক্তি নিজ কানে শুনবেন। আল্লাহ বলেন,
ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐْﻦَ ﺃَﺟَﻠَﻬُﻦَّﻓَﺄَﻣْﺴِﻜُﻮْﻫُﻦَّ ﺑِﻤَﻌْﺮُﻭْﻑٍ ﺃَﻭْ ﻓَﺎﺭِﻗُﻮْﻫُﻦَّ ﺑِﻤَﻌْﺮُﻭْﻑٍ ﻭَﺃَﺷْﻬِﺪُﻭْﺍﺫَﻭَﻱْ ﻋَﺪْﻝٍ ﻣِّﻨﻜُﻢْ
অর্থঃ ‘যখন তারা ইদ্দতে পৌঁছে যায়, তখন যথাবিধি তাদেরকে রেখে দিবে, নতুবা তাদেরকে যথাবিধি বিচ্ছিন্ন করে দিবে এবং তোমাদের মধ্য হতে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে’ (তালাক্ব ৬৫/২)। সাক্ষীগণ পুরুষই হতে হবে। একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা কিংবা চারজন মহিলা হলেও চলবে না। [৪২]
কেননা রাসূল (ছাঃ)বলেছেন,
ﻻَ ﻧِﻜَﺎﺡَ ﺇِﻻَّ ﺑِﻮَﻟِﻰٍّ ﻭَﺷَﺎﻫِﺪَﻯْ ﻋَﺪْﻝٍ
অর্থঃ ‘বিবাহ সংগঠিত হবে না অভিভাবক ও দুজন সাক্ষী ব্যতীত’। [৪৩]
সুত্রঃ [১]. বুখারী/৫০৬৫; মুসলিম/১৪০০; মিশকাত/৩০৮০‘নিকাহ’ অধ্যায়; বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮। [২]. আবূদাউদ হা/২০৫০; নাসাঈ হা/৩২২৭; ইরওয়াউলগালীল হা/১৭৮৪; মিশকাত হা/৩১৯১। [৩]. বুখারী হা/৫০৬৩; মসুলিম হা/১৪০১; মিশকাত হা/১৪৫‘ঈমান’ অধ্যায় ‘কিতাব ও সুন্নাহ অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ;বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮।[৪]. বুখারী হা/৫০৭৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮১, ‘বিবাহ’অধ্যায়।[৫]. বুখারী হা/৫০৭৩; নাসাঈ হা/৩২১৩; মিশকাত হা/৩০৮১।[৬] . মাওলানা আবদুর রহীম, পরিবার ও পারিবারিকজীবন, (ঢাকা : খাইরুন প্রকাশনী, ২০০৫), পৃঃ ৮৫।[৭]. তদেব, ৮৫।[৮]. নাসাঈ হা/৩২১৮, হাদীছ হাসান।[৯]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৩০৯৬, সনদ হাসান।[১০]. বুখারী হা/৫০৬৬; মুসলিম হা/১৪০০; আবু দাঊদহা/২০৪৬।[১১]. ফিকহুস সুন্নাহ ৩/১৩০।[১২]. শরহুল মুমতে‘, ১২/৯।[১৩]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬।[১৪]. আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩১৩০।[১৫]. ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৮।[১৬]. আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১।[১৭]. মুসলিম হা/১৬৭৪, মুসনাদে আহমাদ হা/২১৫১১।[১৮]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬ ‘বিবাহতেঅভিভাবক ও মেয়ের অনুমতি’ অনুচ্ছেদ।[১৯]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৭।[২০]. মুসলিম হা/১৪২১, তিরমিযী, নাসাঈ, বুলূগুল মারামহা/৯৮৫।[২১]. বুখারী , মুসলিম, তিরমিযী, নাসঈ, বুলূগুল মারামহা/৯৮৮।[২২]. আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ,দারেমী, মিশকাত হা/৩১৩০, হাদীছ ছহীহ।[২৩]. আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩১।[২৪]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শরহুলমুমতে‘ আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৭৩ পৃঃ।[২৫]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২, মিশকাত হা/৩১৩৭, বুলূগুল মারামহা/৯৮৬; হাদীছ ছহীহ।[২৬]. বুখারী হা/৫১৩৮, মিশকাত হা/৩১২৮।[২৭]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮২, ৩০৯০, ‘বিবাহ’অধ্যায়।[২৮]. ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭।[২৯]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭-এর আলোচনা দ্র.।[৩০]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০।[৩১]. বুখারী হা/৫১২২।[৩২]. বুখারী হা/৫১২০।[৩৩]. বুখারী হা/৫১৪২, মুসলিম হা/১৪১২,বুলূগুল মারামহা/৯৭৮।[৩৪]. বুখারী হা/৫১৪৪, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১৪৪।[৩৫]. বিস্তারিত দ্র. মাসিক আত-তাহরীক এপ্রিল ২০০১।[৩৬]. তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১০৭।[৩৭]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৯৮।[৩৮]. বুখারী হা/৫০৯০, মুসলিম হা/১৪৬৬, মিশকাতহা/৩০৮২, বুলূগুল মারাম হা/৯৭১।[৩৯]. তিরমিযী হা/১০৮৪-৮৫; মিশকাত হা/৩০৯০; সিললিাছহীহাহ হা/১০২২।[৪০]. বুখারী হা/৩০০৬।[৪১]. আহমাদ. তিরমিযী হা/২১৬৫, ইবনে হিববানহা/৪৫৫৭, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৩০।[৪২]. শরহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৯৭ পৃঃ।[৪৩]. বায়হাকী ৭/১১২, ইরওয়া হা/১৮৪৪, শরহুলমুমতে‘ ১২/৯৪।