بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
ছলাত (الصَّلَاة) এর গুরুত্ব ও ফযিলতঃ
সমস্ত প্ৰশংসা মহান আল্লাহ রব্বুলআলামীনের জন্য যিনি তার বান্দাদের উপর ৫ ওয়াক্ত ছলাত ফরয করেছেন। এবং তার বান্দাদেরকে ছলাত কায়েম (প্রতিষ্ঠিত) করার ও সুন্দরভাবে সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
إِنَّ الصَّلاَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
‘নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনকে নির্লজ্জ ও অপছন্দনীয় কাজ সমূহ হতে বিরত রাখে’ ( আনকাবূত ২৯/৪৫ )। ছলাত ইসলামের প্রধান স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ । ছলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যিনি ইরশাদ করেছেন,
عَن عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللّهُ تَعَالى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَه عَلَى اللهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَه وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَه عَلَى اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَه وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَه. رَوَاهُ أَحْمَد وأَبُوْ دَاوٗدَ وروى مالك وَالنَّسَائِـيُِّ نحوه
অর্থঃ ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, যা আল্লাহ তা‘আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি সলাতের জন্য ভালোভাবে ওযূ করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। ( আহমাদ ও আবূ দাঊদ )। মালিক এবং নাসায়ী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [সহীহ : আহমাদ ২২৭০৪, আবূ দাঊদ ৪২৫, মালিক ১৪, নাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৭০।]
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র ইরশাদ করেছেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَة قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهَرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا هل يُبْقى مِنْ دَرَنِه شَىْءٌ قَالُوا لَا يُبْقى مِنْ دَرَنِه شَيْئٌ قَالَ فَذلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
অর্থঃ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে ? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না কোন ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম) [সহীহ : বুখারী ৫২৮, মুসলিম ৬৬৭, নাসায়ী ৪৬২, তিরমিযী ২৮৬৮, আহমাদ ৮৯২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭২৬, ইরওয়া ১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২।]
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র ইরশাদ করেছেন,
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
অর্থঃ জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মু’মিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সলাত পরিত্যাগ করা। (মুসলিম) [সহীহ : মুসলিম ৮২, আবূ দাঊদ ৪৬৭৮, নাসায়ী ৪৬৪, তিরমিযী ২৬২০, ইবনু মাজাহ্ ১০৭৮।]
ঈমান এর পরেই ছলাতের স্থান। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ৮২ ছালাতের কথা উল্লেখ করেছেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্য হাদিছে ছলাতের কথা বলেছেন। তাই আমাদের সকলের একান্ত কর্তব্য ছলাত গূলো সঠিক ভাবে আদায় করা।
ছলাতের আভিধানিক অর্থ:
‘ছলাত’ -এর আভিধানিক অর্থ দো‘আ, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা । আমাদের বাংলা ভাষায় আরবী ‘সালাত’ শব্দটি ‘নামায’ হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে শব্দটি ফারসী শব্দ। যেহেতু ছলাত শব্দটি একটি ইসলামী পরিভাষা তাই আমাদের উচিত নামাজ না বলে ‘ছলাত’ বলার অভ্যাস করা ।
ছলাতের পারিভাষিক সংজ্ঞা:
শরীআত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘ছালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।
ছলাতের শর্তসমূহ
১। জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। ( পাগল বা জ্ঞানশূন্য হবে না )
২। বিবেকসম্পন্ন হতে হবে। ( সাত বছরের নিম্ন বয়সী শিশুদের উপর ছলাত ফরয না তবে তাদের কে ছলাতের নির্দেশ দিতে হবে এবং দশ বছর হলে ছলাতের জন্য প্রহার করতে হবে )
৩। (ওযু-গোসল করে) পবিত্র হতে হবে।
৪। সঠিক সময় ছলাত আদায় করতে হবে।
৫। সতর আবৃত হতে হবে। আরবীতে ‘আওরাহ’ ও ফারসীতে ‘সতর’ বলা হয়। সতর দেহের অবশ্য আবরণযোগ্য অংশ।
পুরুষের আওরাহঃ
পুরুষের আওরাহ/সতর হচ্ছে নাভি থেকে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত।
বিঃদ্রঃ অনেক ভাইয়েরা এমন ভাবে নাভির নিচে প্যান্ট বা পায়জামা পড়েন যখন ছলাতে রূকু বা সেজদায় জান তখন আমাদের টি-শার্ট বা শার্ট ছতর থেকে সরে যায় যার ফলে আমাদের ছলাত ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
মহিলাদের আওরাহ/সতরঃ
মহিলাদের আওরাহ/সতর হচ্ছে মুখমণ্ডল, হাতের কবজি,কপালের চুল, কান এবং পায়ের গিরার নিচের অংশ । নামাজের সময় এই সতর পুরাপুরি ঢেকে রাখা একটি ফরজ তা বদ্ধ ঘরেই হোক বা লোকালয়ে সবার সামনেই হোক। ছলাতের সময় দেখা যায় আমাদের প্রচলিত শাড়ি পরিধানের কারনে হাত বা পেটের অংশ বা মাথার চুলের অংশ দেখা যায়। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এমন কাপড় পরিধান করে ছলাত পড়া যেন এই অংশ গুলো দেখা না যায়। যেমন- হজ্জে যাওয়ার সময় মহিলারা যে কাপড় পড়েন তাতে সতর পুরাপুরি ঢেকে থাকে। এই জন্য উত্তম হচ্ছে ছলাতের জন্য আলাদা কাপড় রাখা। এবং ভাল ভাবে বুঝে নেই যে এই ফরজ আদায় ছাড়া ছলাত আদায় হবে না। যেমন অজু ছাড়া ছলাত আদায় হয়না তেমনি সতর খোলা রেখে ছলাতপড়লেও সেই ছলাত আদায় হবে না।
বিঃদ্রঃ অনেক বোনেরা এমন পায়জামা বা অনান্য পোষাক পড়েন যখন ছলাতে রূকু বা সেজদায় জান তখন পায়ের গিরার নিচের অংশ থেকে কাপড় সরে যায় যার ফলে আমাদের ছলাত ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
৬। শরীর, পোশাক ও ছলাতের স্থান থেকে নাপাকী দূর করতে হবে।
৭।কা’বামুখী হওয়া:
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কা’বাকে সামনে রেখে) বাইতুল মাকদিসের দিকে ছলাত পড়তেন যে পর্যন্ত এই আয়াত অবতীর্ণ হয়নিঃ
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
অর্থঃ অবশ্যই (হে নবী) আমি তোমার মুখমণ্ডলকে আকাশ পানে বারবার ফিরাতে দেখছি, আমি অবশ্য অবশ্যই তোমাকে তোমার পছন্দনীয় কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিব। অতএব, তোমার মুখমণ্ডলকে মাসজিদুল হারামের অভিমুখে ফিরিয়ে দাও।[সূরা আল-বাক্বারা ১৪৪ আয়াত।]
যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন তিনি কা’বামুখী হয়ে গেলেন। কুবাবাসীরা মসজিদে ফজরের ছলাত আদায়রত ছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ এক আগন্তুক এসে বললঃ আল্লাহর রাসূলের উপর গত রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে তাঁকে কাবামুখী হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরাও তার দিকে মুখ ফিরাও। তাদের মুখগুলো তখন সিরিয়ার দিকে ছিল। খবর শ্রবণান্তে তারা সবাই ঘুরে গেল আর ইমামই তাদেরকে নিয়ে (বর্তমান) কিবলার দিকে ঘুরেছিলেন। [বুখারী, মুসলিম, আহমাদ ]
আল্লাহর রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) যখনই ছলাতে দাঁড়াতেন তখন ফরয হোক আর নফল হোক উভয় অবস্থায়ই কা’বার দিকে মুখ করতেন। এবং তিনি এ ব্যাপারে নির্দেশও দিয়েছেন-
إذا قُمْتَ إلَى الصَّلاةِ فَأَسْبغِ الوُضُوءَ، ثم أسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ، فَكَبِّرْ
“যখন তুমি ছলাতে দাঁড়াবে, তখন পরিপূর্ণরূপে উযু করবে, অতঃপর কিবালামুখী হয়ে তাকবীর বলবে।”[বুখারী, মুসলিম]
৮। ছলাতের নিয়তঃ
যে কোনও আমলের জন্য নিয়ত জরুরী। নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদত বা আমল শুদ্ধ হয় না। মহানবী (সাঃ) বলেন, إِنَّمَا الأعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى “আমলসমূহ তো নিয়তের উপরেই নির্ভরশীল।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১নং)
নিয়ত করা ছলাতের অন্যতম একটি শর্ত। নিয়ত বলে মনের ইচ্ছাকে। তাই নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট। আমাদের দেশে নিয়ত বলতে আমরা (নাওয়াইতু আন) ‘উসাল্লী লিল্লাহি সালাতান———-,পড়ে থাকি সেগুলো কোনো হাদিসে নাই। আর বাস্তবতা এই যে, নিয়তের এত এত শব্দ-সম্ভার দেখে অনেকে ছলাত শিখতেও ভয় পায়। মুখস্থ করলেও অনেকের ঐ অনর্থক বিষয়ে সময় ব্যয় করা হয় মাত্র। পক্ষান্তরে সূরা মুখস্থ করে ৩টি কি ৪টি! তাছাড়া বহু সাধারণ মানুষের নিকটেই নিয়তের শব্দাবলীতে তালগোল খেয়ে যায়। অনেকে তার অর্থই বোঝে না। অথচ অর্থ না বুঝলে নিয়ত অর্থহীন। সুতরাং যা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ নয় তার পিছনে আমরা খামাখা ছুটব কেন ?
ইবনুল কাইয়েম (রহঃ) বলেন, নবী (সাঃ) যখন ছলাতে দাঁড়াতেন তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। এর পূর্বে তিনি কিছু বলতেন না এবং মোটেই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতেন না।
বিঃদ্রঃ তাই নিয়ত অন্তরে করাই যথেষ্ট। আবার অনেকে ছালাত শুরুর আগেই জায়নামাযের দোআ মনে করে ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু…’ পড়েন জায়নামাযের দোআ বলে কিছু নেই।
ছলাত এর আরকানসমূহ
১। কিয়াম বা দাঁড়ানোঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরয ও নফল ছলাতে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন আল্লাহ তা’আলার এই বাণীর অনুসরণেঃ
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় ভরে দাঁড়াও।[সূরা আল-বাকারাহ ২৩৮ আয়াত।]
(বিঃদ্রঃ আমরা অনেকে দাড়িয়ে ছলাত পড়ার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও বসে ছলাত পড়ি অথচ দাঁড়িয়ে ছলাত পড়া নামাজের অন্যতম রূকন। দাড়িয়ে ছলাত পড়ার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও,দাড়িয়ে ছলাত আদায় না করলে আমাদের ছলাত হবে না।)
পীড়িত ব্যক্তির বসে ছলাত আদায়ঃ
কেউ যদি অসুস্থ থাকে যার ফলে দাড়াতে অক্ষম সে বসে সালাত আদায় করবে তাতে কনো সমস্যা হবে না। ‘ইমরান বিন হুছাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ আমি অর্শ রোগে আক্রান্ত ছিলাম, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ
صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ
দাঁড়িয়ে ছলাত পড়, যদি তা না পার তবে বসে পড়বে। যদি তাও না পার তবে কাত হয়ে দেহের পার্শ্বদেশের ভরে শুয়ে পড়বে। [বুখারী, আবু দাউদ ও আহমাদ।]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুর রোগকালীন অবস্থায় বসে ছলাত আদায় করেছেন।
ইতিপূর্বেও তিনি যখন অসুস্থ হয়েছিলেন তখন আরো একবার বসে ছলাত আদায় করেন। লোকেরা তার পিছনে দাঁড়িয়ে ছলাত পড়ছিল। তিনি তাদেরকে ইঙ্গিতে বললেন বস, তখন তারা সবাই বসে যায়। ছলাত শেষ করে বললেনঃ
ان کنتم آنفا لتفعلون فعل فارس والروم یقومون علی ملوکهم و هم قعود فلا تفعلوا إنما جعل الإمام ليؤتم به فإذا ركع فاركعوا وإذا رفع فارفعوا وإذا صلى جالساً فصلوا جلوسا (أجمعون
অর্থঃ কিছুক্ষণ পূর্বে তোমরা পারস্য ও রোম সম্প্রদায়ের কাজ করতে শুরু করেছিলো। তারা তাদের রাজা-বাদশাদেরকে উপবিষ্ট অবস্থায় রেখে নিজেরা দাঁড়িয়ে থাকে। তোমরা এমনটি করো না। ইমামকে কেবল অনুকরণের জন্যই নিয়োগ করা হয়। তাই তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরা রুকু কর, আর তিনি যখন মাথা উঠান তখন তোমরাও মাথা উঠাও, তিনি যখন বসে ছলাত আদায় করেন তখন তোমরা সবাই বসে ছলাত আদায় কর।[বুখারী, মুসলিম]
২। তাকবীরে তাহরীমা :
দুই হাতের আঙ্গুল সমূহ ক্বিবলামুখী খাড়াভাবে কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে দুনিয়াবী সবকিছুকে হারাম করে দিয়ে স্বীয় প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করে তাকবির বলবেন অর্থাৎ ‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) আর এই তাকবীরকেই তাকবীরে তাহরীমা বলে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ، وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ
অর্থঃ ছলাতের চাবি পবিত্রতা অর্জন (ওযু বা গোসল) আর তাকবীর দ্বারা ছলাতের ভিতর নিষিদ্ধ কাজগুলো হারাম হয়ে যায়। এবং সালাম দ্বারা তা হালাল হয়ে যায়। [আবু দাউদ, তিরমিযী]
৩। ক্বিরাআত :
সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হলে প্রথম দুই রাকআতে কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তেলাওয়াত করবেন।
কিন্তু মুক্তাদী (যিনি ইমামের পিছনে ছলাত পড়েন) সূরা ফাতিহা পাঠ করা না করা নিয়ে হাদিসে উভয় ধরনের মত পাওয়া যায়।
* সূরা ফাতিহা ইমামের পিছনে পড়তে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন হযরত উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَّمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
অর্থাৎ ‘ঐ ব্যক্তির ছলাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না’। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২]
* সূরা ফাতিহা ইমামের পিছনে পড়তে হবে না ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ করলেই তা মুক্তাদির পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন
إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا ، وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا
অর্থঃ ইমামকে কেবল তার অনুসরণের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। অতএব তিনি যখন আল্লাহ আকবার বলেন তখন তোমরা আল্লাহ আকবার বল এবং তিনি যখন কিরাত পড়েন তখন তোমরা চুপ থাকবে। [মুসলিম,আবু দাউদ]
من كان له إمام فقراءة الإمام له قراءة
অর্থঃ যে ব্যক্তির ইমাম থাকবে তাঁর ইমামের কিরাতই তার কিরাতের জন্য যথেষ্ট।
[ইবনু আবী শাইবাহ (১/৯৭/১) দারাকুতনী, ইবনু মাজাহ, ত্বহাবী ও আহমাদ একে মুসনাদ ও মুরসালভাবে অনেক সূত্রে বৰ্ণনা করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ একে শক্তিশালী বলেছেন।]
বিঃদ্রঃ ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা যদি কেউ পড়ে বা না পড়ে এই নিয়ে মারামারি করা বা একে অপরকে মন্দ ভাবা মোটেই ঠিক না।
৪। রুকূ
রুকূ অর্থ ‘মাথা ঝুঁকানো’ (الإنحناء)। পারিভাষিক অর্থ, শার’য়ী পদ্ধতিতে আল্লাহর সম্মুখে বিনয়ের সাথে মাথা ঝুঁকানো। ক্বিরাআত শেষে মহাপ্রভু আল্লাহর সম্মুখে সশ্রদ্ধচিত্তে মাথা ও পিঠ ঝুঁকিয়ে রুকূতে যেতে হয়। রুকূতে যাওয়ার সময় ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবেন । অতঃপর দুই হাতের আঙ্গুল খোলা রেখে দুই হাঁটুর উপরে ভর দিয়ে রুকূ করবেন। রুকূর সময় পিঠ ও মাথা সোজা ও সমান্তরাল থাকবে। হাঁটু ও কনুই সোজা থাকবে। অতঃপর সিজদার স্থান বরাবর নযর স্থির থাকবেন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা ও নিজের ক্ষমা প্রার্থনায় মনোনিবেশ করে দোআ পড়তে থাকবেন। রুকূর জন্য হাদীছে অনেকগুলি দোআ এসেছে। তন্মধ্যে রুকূর জন্য سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ (সুবহা-না রব্বিয়াল আযীম) মহা পবিত্র আমার রব যিনি মহান সর্বাধিক প্রচলিত। এ দোআ কমপক্ষে তিনবার পড়বেন। এ দোআ একবার পড়া ফরজ। তিন বারের বেশিও পড়া যাবে যার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই।
৫। ক্বওমা :
ক্বওমা (রুকূ থেকে দাঁড়ান কে ক্বওমা বলে) অতঃপর রুকূ থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবেন। رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা)। অথবা পড়বেন – رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ ‘রববানা ওয়া লাকাল হাম্দু হাম্দান কাছীরন ত্বইয়েবাম মুবা-রকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়)।ক্বওমার দোআ একবার পড়বেন।
বিঃদ্রঃ আমাদের অনেকেই রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাড়িয়েই সিজদায় চলে যাই অথচ ক্বওমা ছলাতের অন্যতম রুকন সোজা ও সুস্থিরভাবে না দাড়ালে আমদের ছলাতে ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৬। সিজদা :
ক্বওমার দোআ পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে সিজদায় যাবেন সিজদার দোআ পড়বেন سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى (সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা) ।(অর্থঃ ‘মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ’)। কমপক্ষে তিনবার পড়বেন। একবার পড়া ফরজ। হাদিসে সিজদার আরও দোআ রয়েছে। সিজদাতে দুই হাত ক্বিবলামুখী করে মাথার দুপাশে কাঁধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবেন। সিজদার সময় গাল হাত থেকে দূরে রাখবেন। কনুই হাঁটু থেকে ফাঁকা রাখবেন। হাত মাটি থেকে ফাঁকা রাখবেন। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবেন ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন। এ সময় স্থিরভাবে বসে দোআ পড়বেন
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ
(আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী ওয়ারহাম্নী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহ্দিনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়ার্ক্বনী )
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।
অতঃপর ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবেন ও দোআ পড়বেন। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে যাবেন।
বিঃদ্রঃ আমরা অনেকেই দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসিনা অথচ দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা ছলাতের অন্যতম ওয়াজিব।
৭। বৈঠক :
২য় রাকআত শেষে বৈঠকে বসবেন। যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল তাশাহ্হুদ পড়বেন ৩য় রাকআতের জন্য উঠে যাবেন। আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে তাশাহ্হুদ পড়ার পরে দরূদ, দোআয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হলে বেশী বেশী করে অন্য দোআ পড়বেন। এসময় সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবেন ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন ডান পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী করবেন। বৈঠকের দো‘আ সমূহ :
(ক) তাশাহ্হুদ (আত্তাহিইয়া-তু):
اَلتَّحِيَّاتُ ِللهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ-
উচ্চারণ : আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আনণা মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু ।
অনুবাদ : যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (বুঃ মুঃ)
বিঃদ্রঃ ছলাতে তাশাহ্হুদ পড়া ওয়াজিব কেহ তাশাহ্হুদ পড়তে ভুলে গেলে সেজদা সাহু দিলে ছলাত আদায় হয়ে যাবে। বাকি নিম্নোক্ত দুরুদ এবং দুয়া গুলো পড়া সুন্নাত।
(খ) দরূদ :
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রক্তা ‘আলা ইব্রা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ ।
অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।
(গ) দো‘আয়ে মাছূরাহ :
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدَكَ وَارْحَمْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফ্সী যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা, ফাগ্ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহাম্নী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম’।
অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।
এর পর অন্যান্য দোআ সমূহ পড়তে পারেন। যেমনঃ
সালামের আগে শেষ তাশাহহুদের পরের দো‘আ :
«اللَّهُــمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ».
উচ্চারণ : (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া মিন ‘আযা-বি জাহান্নামা, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-তি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে,জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে”। [বুখারী ২/১০২, নং ১৩৭৭; মুসলিম ১/৪১২, নং ৫৮৮]
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ. اللَّهُمَّ إِنِّي أَعوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ».
উচ্চারণ : (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিন আযা-বিল ক্বাবরি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল মা’ছামি ওয়াল মাগরামি)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে, আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই পাপাচার ও ঋণের বোঝা থেকে”।[বুখারী ১/২০২, নং ৮৩২; মুসলিম ১/৪১২, নং ৫৮৭।]
«اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنوبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفورُ الرَّحيمُ».
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা। ওয়ালা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহসমূহ কেউই ক্ষমা করতে পারে না। অতএব আমাকে আপনার পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমা দ্বারা মাফ করে দিন, আর আমার প্রতি দয়া করুন; আপনিই তো ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু”।
[বুখারী ৮/১৬৮, নং ৮৩৪; মুসলিম ৪/২০৭৮, নং ২৭০৫।]
«اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبادَتِكَ».
উচ্চারণ : (আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ও শুকরিকা ওয়াহুসনি ইবা-দাতিকা)।
অর্থঃ“হে আল্লাহ! আপনার যিক্র করতে, আপনার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন”। [ আবূ দাউদ ২/৮৬, নং ১৫২২; নাসাঈ ৩/৫৩, নং ২৩০২। ]
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ»
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”।
[আবূ দাউদ, নং ৭৯২; ইবন মাজাহ্ নং ৯১০। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ২/৩২৮।]
(৮) সালাম : দোআ মাছূরাহ শেষে প্রথমে ডাইনে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ (আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক!) বলে সালাম ফিরাবেন।
ছলাত ভঙ্গের কারণঃ
- উপরে উল্লেখিত ছলাতের শর্তাবলী ও আরকান সমূহের কোন একটি বিষয় ছুটে গেলে ছলাত ভঙ্গ হয়ে যাবে। এবং পুনরায় ছলাত আদায় করতে হবে।
- ইচ্ছাকৃত কথা বলা
- সম্পূর্ণ শরীর ক্বিবলার দিক থেকে সরে যাওয়া।
- পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া।
- বিনা প্রয়োজনে অধিক নড়াচড়া করা।
- অট্টহাসি দেয়া।
- ইচ্ছা করে ইমামের আগে যাওয়া।