সালাত
রাসূলে আকরাম (সা.)এর উপর সালাত পাঠ করা ও সালাম পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত । মহান আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর সালাত প্রদান করেন এবং বিশ্বাসীদের বলেছেন (নবীর) উপর সালাত ও সালাম প্রেরণ করার জন্য। আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ
(إِنَّ اللهَ وَمَلٰٓئِكَتَه” يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ط يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا)
নিশ্চই আল্লাহ এবং তাঁর মালাইকা নাবীর জন্য (ছলাত) রহমাত প্রার্থনা করে। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নাবীর জন্য ছলাত রহমাত প্রার্থনা কর এবং তার প্রতি প্রচুর পরিমাণে সালাম পাঠাতে থাক। (সূরাহ আহযাব ৩৩/৫৬)
সালাত এর অর্থ
সালাত শব্দের অর্থ রহমত ও বরকতের জন্য দু‘আ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা। শব্দটি যখন আল্লাহর সাথে ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয় রহমত, করুণা ও বরকত প্রদান। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল (সা.)-কে সালাত প্রদান বা সালাত প্রেরণের অর্থ তাঁকে রহমত প্রদান, সর্বোত্তম মর্যাদা ও প্রশংসা প্রদান। যখন মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন এর অর্থ হয় দোয়া,প্রার্থনা। সালাত ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। ফিরিশতারা কারো উপর সালাত প্রেরণ করেছেন অর্থ তাঁরা আল্লাহর কাছে উক্ত ব্যক্তির জন্য রহমতের, মর্যাদা ও ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করেছেন। কোনো মানুষ অন্যের উপর ‘সালাত’ প্রদান করেছে বা ‘সালাত’ প্রেরণ করেছে বলতে বুঝান হয় ঐ মানুষটি তাঁকে মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করেছে, তাঁর জন্য রহমত, ক্ষমা ও মর্যাদার দু‘আ করেছে।
‘সালাত’ ইসলামের অন্যতম পরিভাষা। মুসলিম জীবনের অন্যতম দু’টি ইবাদত ‘সালাত’ নামে পরিচিত ; প্রথমটি ,- ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ , ইসলামের অন্যতম ইবাদত ‘সালাত’ যা আমরা বাংলায় ফার্সী প্রতিশব্দ ‘নামায’ বলে অভিহিত করি। দ্বিতীয়টি ,- রহ্মাতাল্লিল আলামীন (সমগ্র বিশ্ব জাহানের জন্য রহ্মাত স্বরূপ) মানবতার মুক্তির দূত, আল্লাহর প্রিয়তম ও শ্রেষ্ঠতম নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্য ‘সালাত’ প্রেরণ করা, যাকে আমরা বাংলায় ফার্সী শব্দে দরুদ বলে থাকি।বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ইসলামী শব্দের ফার্সী অনুবাদ বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করার ফলে তা মূল আরবী আবেদন হারিয়ে ফেলেছে এবং অনেক সময় আমরা মূল আরবী পরিভাষা যা কুরআন করীম, হাদীস ও সকল ইসলামী গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা আমরা জানিও না।তাছাড়া সালাত শব্দটি পবিত্র কুরানুল কারীমের শব্দ যা একবার বললে ৪০ টি জাযা পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ্। যেহেতু সালাত শব্দটি ইসলামী পরিভাষা তাই আমাদের উচিত নামায এবং দুরূদ পরিহার করে সালাত বলার অভ্যাস করা।
কিভাবে আমরা সালাত পড়বো
কা’ব বিন আজুরা (রাঃ) বলেনঃ যখন (إن الله وملائكته يصلون على النبي) এই আয়াতটি আয়াতটি নাযিল হলো তখন সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর নবী, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত প্রেরণ করব? তখন তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
অর্থঃ হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করুন যেমন আপনি সালাত প্রদান করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিজনের উপর, নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহাসম্মানিত। এবং আপনি বরকত প্রদান করুন মুহাম্মাদের উপরে এবং মুহাম্মাদরে পরিজনের উপরে যেমন আপনি বরকত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের উপরে এবং ইবরাহীমের পরিজনের উপরে। নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহা সম্মানিত ।”[আহমাদ]
বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত অন্য হাদীসে কা’ব (রাঃ) বলেনঃ
“রাসূলে আকরাম (সা.)-কে বলা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে সালাম দেওয়া তো আমরা জানি, কিভাবে সালাম দিতে হবে, কিন্তু আপনার উপর ‘সালাত’ আমরা কিভাবে প্রদান করব? তখন তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ . اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
অর্থঃ “হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করুন যেমন আপনি সালাত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের পরিজনের উপর, নিশ্চয় আপনি মহা প্রশংসিত মহা সম্মানিত।”
কখন আমরা সালাত পাঠ করবো
আমরা যখন ইচ্ছে তখনই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর প্রতি সালাত প্রেরণ করতে পারি কেননা এই সালাত পাঠ খুবই ফযিলতপূর্ন আমল।তবে বিশেষ কিছু মূহুর্তে এর ফযিলত ও গূরুত্ব আরোও অনেকগুন বেশি।যেমনঃ
১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নাম শুনলে সালাত পড়া অত্যান্ত জরুরি।
মালিক বিন হাসান বিন মালিক বিন হুয়াইরিস তাঁর পিতা হতে, তিনি (হাসান) তাঁর (মালেকের) পিতামহ (মালিক বিন হুয়াইরিষ) হতে বর্ণনা করে বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে চড়লেন। প্রথম ধাপে চড়েই বললেন, ‘‘আমীন।’’ অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে চড়ে বললেন, ‘‘আমীন’’ অনুরূপ তৃতীয় ধাপেও চড়ে বললেন, ‘‘আমীন।’’ অতঃপর তিনি (এর রহস্য ব্যক্ত করে) বললেন, ‘‘আমার নিকট জিবরীল উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রমযান পেল অথচ পাপমুক্ত হতে পারল না আল্লাহ তাকে দূর করেন।’ তখন আমি (প্রথম) ‘আ-মীন’ বললাম। তিনি আবার বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে জীবিতাবস্থায় পেল অথচ তাকে দোযখে যেতে হবে, আল্লাহ তাকেও দূর করুন।’ এতে আমি (দ্বিতীয়) ‘আ-মীন’ বললাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘যার নিকট আপনার (নাম) উল্লেখ করা হয় অথচ সে আপনার উপর দরূদ পাঠ করে না, আল্লাহ তাকেও দূর করুন।’ এতে আমি (তৃতীয়) ‘আমীন’ বললাম। (ইবনে হিব্বান ৪০৯, ৯০৭, সহীহ তারগীব ৯৮২)
২। আযানের পরে । ওসীলার দোয়া (আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-য়েমাহ, আ-তে মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহ’) পূর্বে।
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুনলে তোমরাও তার মতই বল। অতঃপর আমার উপর সালাত পাঠ কর; কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহ্মত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আমার জন্য আল্লাহর নিকট অসীলা প্রার্থনা কর, কারণ, অসীলা হল জান্নাতের এমন এক সুউচ্চ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একটি বান্দার জন্য উপযুক্ত। আর আমি আশা রাখি যে, সেই বান্দা আমিই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য ঐ অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফাআত (সুপারিশ) অবধারিত হয়ে যাবে।” (মুসলিম, সহীহ প্রমুখ, মিশকাত ৬৫৭নং)।
৩। সকাল সন্ধ্যায় ১০ বার করে সালত পাঠ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর হাদিস-
“যে ব্যক্তি সকালে আমার উপর ১০ বার সালাত (দরুদ) পাঠ করবে এবং সন্ধ্যায় ১০ বার আমার উপর সালাত পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভের সৌভাগ্য তাঁর হবে।”[মাজমাউয যাওয়াইদ]
৪। জুমার দিন বেশি বেশি রসূল (সাঃ) এর প্রতি সালাত পাঠ করা।
“তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন শুক্রবার। এদিনেই আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এদিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, এদিনেই সিংগা ফুঁক দেওয়া হবে, এদিনেই কিয়ামত হবে। কাজেই এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে সালাত পাঠ করবে, কারণ তোমাদের সালাত আমার কাছে পেশ করা হবে।” সাহাবীগণ বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি তো (কবরের মাটিতে) বিলুপ্ত হয়ে যাবেন, মিশে যাবেন, কিভাবে তখন আমাদের সালাত আপনার নিকট পেশ করা হবে?” তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ মাটির জন্য নিষিদ্ধ করেছেন নবীদের দেহ ভক্ষণ করা।” [সুনানুন নাসাঈ, সুনানু ইবনি মাজাহ , মুসতাদরাক হাকিম ]
সালত পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত
বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর সালাত পাঠের বিভিন্ন প্রকাররের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।
(১) আল্লাহ দয়া, ক্ষমা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ (রাঃ) বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا
“তোমরা আমার উপর সালাত পাঠ কর; কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর ১০ বার সালাত (রহমত) পাঠাবেন ” [ মুসলিম]
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ وَرُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ
“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে আল্লাহ তাকে ১০ বার সালাত (রহমত) করবেন, তাঁর ১০টি পাপ ক্ষমা করা হবে এবং তাঁর মর্যাদা ১০টি স্তর বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”[নাসাঈ, মুসনাদ আহমাদ]
(২) ফিরিশতারা রহমত ও মর্যাদার জন্য দু‘আ করবেন
সালাত পাঠের পুরস্কারের আরেকটি দিক, আল্লাহর সম্মানিত ফিরিশতাগণ সালাত পাঠকারীর জন্য দু‘আ করেন। আমির বিন রাবিয়া (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে খুতবায় বলতে শুনেছি যে,
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً لَمْ تَزَلِ الْمَلَائِكَةُ تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا صَلَّى عَلَيَّ، فَلْيُقِلَّ عَبْدٌ مِنْ ذَلِكَ أَوْ لِيُكْثِرْ
“যে ব্যক্তি আমার উপর সালাত (দরুদ) পাঠ করবে, যতক্ষণ যে সালাত পাঠ করতে থাকবে ততক্ষণ ফিরেশতাগণ তাঁর জন্য সালাত (দু‘আ) করতে থাকবেন, অতএব কোনো বান্দা চাইলে তা বেশি করে করুক অথবা কম করে করুক।” [মুসনাদ আহমাদ , ইবনু মাজাহ ]
(৩) সালাত রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে পৌঁছান হবে
যে কোনো মুসলিম দুনিয়ার যেখানেই থাক না কেন, দুনিয়ার যে প্রান্ত থেকেই সে সালাত পাঠ করুক না কেন, তাঁর সালাত মদীনা মুনাওয়ারায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পৌঁছান হবে। আউস বিন আউস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة فيه خلق آدم عليه السلام وفيه قبض وفيه النفخة وفيه الصعقة فأكثروا علي من الصلاة فإن صلاتكم معروضة علي قالوا يا رسول الله وكيف تعرض صلاتنا عليك وقد أرمت أي يقولون قد بليت قال إن الله عز وجل قد حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء عليهم السلام
“তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন শুক্রবার। এদিনেই আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এদিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, এদিনেই সিংগা ফুঁক দেওয়া হবে, এদিনেই কিয়ামত হবে। কাজেই এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে সালাত পাঠ করবে, কারণ তোমাদের সালাত আমার কাছে পেশ করা হবে।” সাহাবীগণ বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি তো (কবরের মাটিতে) বিলুপ্ত হয়ে যাবেন, মিশে যাবেন, কিভাবে তখন আমাদের সালাত আপনার নিকট পেশ করা হবে?” তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ মাটির জন্য নিষিদ্ধ করেছেন নবীদের দেহ ভক্ষণ করা।” [সুনানুন নাসাঈ, সুনানু ইবনি মাজাহ , মুসতাদরাক হাকিম ]
(৪) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শাফায়াত লাভের মাধ্যম
বিভিন্ন হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, সালাত পাঠকারীর জন্য আখেরাতের মুক্তি, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শাফায়াত ও জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। আবু দারদা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
من صلى علي حين يصبح عشرا وحين يمسي عشرا أدركته شفاعتي يوم القيامة
“যে ব্যক্তি সকালে আমার উপর ১০ বার সালাত (দরুদ) পাঠ করবে এবং সন্ধ্যায় ১০ বার আমার উপর সালাত পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভের সৌভাগ্য তাঁর হবে।”[মাজমাউয যাওয়াইদ]
(৫) আল্লাহ সকল সমস্যা ও দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন
উবাই বিন কাব (রাঃ) বলেছেন, রাতের তিনভাগের দুইভাগ অতিক্রান্ত হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে বলতেনঃ হে মানুষেরা, তোমরা আল্লাহর যিকর কর, আল্লাহকে স্মরণ কর, কিয়ামত এসে গেছে! কিয়ামত এসে গেছে! মৃত্যু তার আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে এসে উপস্থিত! মৃত্যু তার আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে এসে উপস্থিত! আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার উপর অনেক সালাত পাঠ করি, আমি (আমার সকল দু‘আ প্রার্থনার) কী পরিমাণ অংশ আপনার সালাত হিসাবে নির্ধারিত করব? তিনি বললেনঃ তোমার যা ইচ্ছা হয়। আমি বললামঃ এক চতুর্থাংশ? তিনি বললেনঃ তোমার যা ইচ্ছা, তবে যদি আরো বেশি কর তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললামঃ অর্ধেক? তিনি বললেনঃ তোমার যা ইচ্ছা, তবে যদি আরো বেশি কর তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললামঃ দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেনঃ তোমার যা ইচ্ছা, তবে যদি আরো বেশি কর তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললামঃ আমার সকল প্রার্থনা ও দু‘আ আপনার (সালাত পাঠের) জন্যই নির্ধারিত করব। তখন তিনি বললেনঃ
إذاً تُكفَى همك، ويُغفَرَ لك ذنبك
“তাহলে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।” [সুনানুত তিরমিযী , মুসনাদ আহমাদ , মুসতাদরাক হাকিম ]
(৬) দোয়া কবূল হওয়ার মাধ্যমঃ
রাসূলুল্লাহ (সা.) উপর সালাত পাঠ আমাদের প্রার্থনা কবুল হওয়ার অন্যতম ওসীলা। আব্দুল্লাহ বিন মাস’ঊদ (রাঃ) বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম, আর নবীয়ে আকরাম (সা.), আবু বকর ও উমার তাঁর সাথে ছিলেন। আমি যখন (সালাতের তাশাহহুদের বৈঠকে) বসলাম তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর গুণ বর্ণনা করলাম, এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর সালাত পাঠ করলাম এবং এরপর আমার নিজের জন্য প্রার্থনা করলাম। তখন নবীয়ে রাহমাত (সা.) বললেনঃ
سَلْ تُعْطَهْ سَلْ تُعْطَهْ
“এখন প্রর্থনা কর, তোমার প্রার্থনা কবূল করা হবে, তুমি প্রার্থনা কর, তোমার প্রার্থিত বস্তু দেওয়া হবে।” [ তিরমিযী বলেন]
দু‘আর আগে দুরুদ শরীফ পাঠে উৎসাহ প্রদান করে এবং সালাত পাঠকে দু‘আ কবুলের অন্যতম ওসীলা হিসাবে বর্ণনা করে আরো অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। দু‘আর শেষে সালাত পাঠের বিষয়ে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়ছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
كل دعاء محجتوب حتى يصلى على النبى صلى الله عليه وسلم
“সকল দু‘আ পর্দার আড়ালে থাকবে (আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না) যতক্ষণ না নবীর উপর (সা.) সালাত পাঠ না করবে।” [আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ ] উমার (রাঃ) থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত হয়েছে।[ তিরমিযী ]
(৭) রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাম পাঠকারীর জন্য সালাম এর উত্তর দেন
সালাত ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আমাদের আরেকটি কর্তব্য তাঁর প্রতি সালাম জানান। আল্লাহ কুরআন করীমে সালাত ও সালাম একসাথে উল্লেখ করেছেন। আমরাও সাধারণত সালাত ও সালাম একত্রে পড়ে থাকি। উপরে আলোচিত একাধিক হাদীসে সালাতের সাথে সালামের উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হাদীসে দেখেছি যে আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাবীবের সম্মানে বলেছেন যে, “যদি কেউ আপনার উপর ১ বার সালাত পাঠ করে তবে আমি তাঁর উপর ১০ বার সালাত (রহমত ও দয়া) দান করব। আর যদি কেউ ১ বার আপনার উপর সালাম জানায় আমি তাঁর উপর ১০ বার সালাম জানাই।” অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ বিন মাস’ঊদ (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
إن لله ملائكة سياحين في الأرض يبلغوني من أمتي السلام
“আল্লাহর কিছু ফিরিশতা আছেন যারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ান, আমার উম্মতের সালাম তাঁরা আমার কাছে পৌঁছে দেন।” [সুনানুন নাসাঈ]
সালাত না পাঠের পরিণতি
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর সালাত পাঠ করা আমাদের কর্তব্য। আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
الْبَخِيلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيّ
“কৃপণ ঐ ব্যক্তি যার নিকট আমার উল্লেখ করা হলেও সে আমার উপর সালাত পাঠ করল না।” তিরমিযী ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।[তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৫১, হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৭৩৪।]
এ ধরনের মানুষ শুধু কৃপণই নয়, সে আল্লাহর রহমত থেকেও বঞ্চিত। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
رَغِم أنْفُ رجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ علَيَّ
“পোড়া কপাল হতভাগা ঐ ব্যক্তির, যার কাছে আমার কথা স্মরণ করা হলো অথচ আমার উপর সালাত পড়ল না।”[তিরমিযী]
সংগৃহীতঃ রাহে বেলেয়েত । ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ও অন্যন্য।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদেরকে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর প্রতি বেশি বেশি সালাত ও সালাম পাঠ করার তৌফিক দান করেন (আমিন)।