★ ২৪তম ছওম এর তারাবীহ ★
[শবে ক্বদরের সম্ভাবনাময় শেষ দশকের একটি রাত]
আজ ২৩ তম রমাদান, ১৪৪৫ হিজরি, বুধবার এশার ছলাতের ২৪তম ছওম এর তারাবীহ ছলাতে পবিত্র কোরআনের ২৭তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।
২৭তম পারা (সুরা যারিয়া’ত এর ৩১নং আয়াত থেকে সুরা হাদীদের ২৯নং আয়াত পর্যন্ত) থেকে সংক্ষেপে কিছু অংশ তুলে ধরা হল:-
১। আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর। [ সুরা যারিয়া’ত-৪৯ ]
২। আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। [ সুরা যারিয়া’ত-৫৬ ]
৩। নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে। তারা উপভোগ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন। তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তার প্রতিফলস্বরূপ তোমরা তৃপ্ত হয়ে পানাহার কর। তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব।
যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, আমি তাদেরকে তাদের সন্তান-সন্ততির সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না।
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী।
আমি তাদেরকে দেব ফল-মূল এবং মাংস যা তারা চাইবে।
সেখানে তারা একে অপরকে পানপাত্র দেবে; যাতে অসার বকাবকি নেই এবং পাপকর্মও নেই। সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ কিশোররা তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। [ সুরা তুর-১৭-২৪ ]
৪। আপনার পালনকর্তার নির্দেশের অপেক্ষায় সবর করুন। আপনি আমার দৃষ্টির সামনেই রয়েছেন এবং আপনি আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন যখন আপনি শয্যা ত্যাগ করেন। এবং রাত্রির কিছু অংশে এবং তারকা অস্ত গমনের পর তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন। [ সুরা তুর-৪৮,৪৯ ]
৫। যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীলকার্য থেকে বেঁচে থাকে, ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা অপরিসীম। তিনি তোমাদের সম্পর্কে ভাল জানেন; যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণরুপে অবস্থান কর। অতএব তোমরা আত্নপ্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে মুত্তাকী। [ সুরা নাজম-৩২ ]
৬। কোন ব্যক্তি অপরের গোনাহ বহন করবে না। এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে।[ সুরা নাজম-৩৮,৩৯ ]
৭। আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি? [ সুরা ক্বামার-১৭ ]
৮। নিশ্চয়ই অপরাধীরা পথভ্রষ্ট ও বিকারগ্রস্ত। যেদিন তাদেরকে মুখ হিঁচড়ে টেনে নেয়া হবে জাহান্নামের দিকে; বলা হবেঃ জাহান্নামের আযাব আস্বাদন কর। [ সুরা ক্বামার-৪৭,৪৮ ]
৯। তাদের সমস্ত কার্যকলাপ আমলনামায় লিপিবদ্ধ আছে। ছোট ও বড় সবই লিপিবদ্ধ। [ সুরা ক্বামার-৫২,৫৩ ]
১০। তোমরা ওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওজনে কম দিয়ো না। [ সুরা আর-রহমান-৯ ]
১১। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? [ সুরা আর-রহমান-১৪-১৬ ]
১২। ভূপৃষ্টের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া। [ সুরা আর-রহমান-২৬,২৭ ]
১৩। এটাই জাহান্নাম, যাকে অপরাধীরা মিথ্যা বলত। তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটোছুটি করবে। [ সুরা আর-রহমান-৪৩,৪৪ ]
১৪। উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত আর কি হতে পারে? [ সুরা আর-রহমান-৬০ ]
১৫। যখন কিয়ামতের ঘটনা ঘটবে, এটার সংঘটন অস্বীকার করার কেউ থাকবে না। এটা কেহকে করে দেবে নীচু, কেহকে করে দেবে সমুন্নত। যখন প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী। এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা। [ সুরা ওয়াক্বিয়া-১-৬ ]
১৬। যারা ডান দিকে থাকবে, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল। তারা থাকবে এক উদ্যানে, যেখানে থাকবে কাঁটাবিহীন কুল বৃক্ষ। এবং কাঁদি কাঁদি কলায়, এবং দীর্ঘ ছায়ায় এবং প্রবাহিত পানিতে, ও প্রচুর ফল-মূলে, যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়। আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়। আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি।
অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী।সোহাগিনী, সমবয়স্কা। (এ সবই) ডান দিকের লোকদের জন্যে। [ সুরা ওয়াক্বিয়া-২৭-৩৮ ]
১৭। বাম দিকের লোক, কত না হতভাগা বামদিকের দল। তারা থাকবে প্রখর বাষ্পে এবং উত্তপ্ত পানিতে, এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়। যা শীতল নয় এবং আরামদায়কও নয়।
তারাতো ইতিপূর্বে মগ্ন ছিল ভোগবিলাসে। এবং তারা সদাসর্বদা ঘোরতর পাপকর্মে ডুবে থাকত। তারা বলতঃ আমরা যখন মরে অস্থি ও মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে যাব, তখনও কি পুনরুত্থিত হব? এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণও! বলুনঃ পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ,
সবাই একত্রিত হবে এক নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে। অতঃপর হে পথভ্রষ্ট, মিথ্যারোপকারীগণ। তোমরা অবশ্যই ভক্ষণ করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে, অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে, অতঃপর তার উপর পান করবে উত্তপ্ত পানি। পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়। কেয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন। [ সুরা ওয়াক্বিয়া-৪১-৫৬ ]
১৮। তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই ব্যপ্ত, তিনিই গুপ্ত এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক অবহিত। [ সুরা হাদীদ-৩ ]
১৯। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথেই আছেন । তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। [ সুরা হাদীদ-৪ ]
২০। কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম ধার দিবে? এরপর তিনি তার জন্যে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্যে রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার। [ সুরা হাদীদ-১১ ]
২১। নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ বেশী এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার। [ সুরা হাদীদ-১৮ ]
২২। মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজে অনুগ্রহের দ্বিগুণ অংশ তোমাদেরকে দিবেন। তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়। [ সুরা হাদীদ-২৮ ]
( সূরা যারিয়াত ৩১-৬০)
পারার শুরুতে ফেরাউন সম্প্রদায়, আদ ও সামুদ জাতি এবং হজরত নুহ ও লুত (আ.) এর সম্প্রদায়ের পরিণতি কী হয়েছিল, তা তুলে ধরা হয়েছে। এরপর আসমান-জমিন সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। সূরার শেষাংশে জিন ও মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে বলা হয়েছে, তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার জন্য এবং তার মারেফত হাসিল করার জন্য। প্রত্যেকের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার ওপর। তবে যারা কুফর ও শিরকে লিপ্ত হবে, অচিরেই তাদের ওপর অবধারিত আজাব নেমে আসবে।
(সূরা তূর, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৪৯, রুকু ২)
সূরায় জাহান্নামের ভয়াবহতা এবং জান্নাতে মুত্তাকিদের পুরস্কার সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। নবীজির দাওয়াতের বিপরীতে মুশরিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের এহেন আচরণের বিপরীতে নবীজিকে দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রাখার হুকুম দেওয়া হয়েছে। সূরার শেষাংশে আল্লাহ তায়ালার প্রভুত্ব ও একত্ববাদের দলিল পেশ করা হয়েছে, কাফের মুশরিকদের ভ্রান্ত চিন্তাধারা খ-ন করা হয়েছে এবং যারা ফেরেশতাদের আল্লাহ তায়ালার কন্যাসন্তান বলে আখ্যায়িত করে, তাদের নিন্দা জানানো হয়েছে।
(সূরা নাজ্ম, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৬২, রুকু ৩)
সূরার শুরুতে রাসুল (সা.) এর সত্যবাদিতা এবং মেরাজের বিবরণ রয়েছে। (১-১৮)।
যারা মূর্তির উপাসনা করে, ফেরেশতাদের আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে, তাদের নিন্দা করা হয়েছে। (১৯-২৩)।
সূরায় কেয়ামতের বর্ণনা রয়েছে, যেখানে সবকিছুর চূড়ান্ত ফায়সালা হয়ে যাবে। (৩২-৩৫)।
এরপর বলা হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই নিজ কৃতকর্মের জিম্মাদার।
কারও গোনাহের বোঝা অপরের কাঁধে চাপানো হবে না। (৩৮-৪১)।
আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা দিয়ে সূরার সমাপ্তি হয়েছে।
সূরা ক্বমার, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৫, রুকু ৩
সূরায় মোমিনদের জন্য সুসংবাদ, নাফরমানদের জন্য সতর্কবাণী এবং বিভিন্ন হিতোপদেশের কথা আলোচিত হয়েছে। এছাড়া রিসালাত, আখেরাত, বিচার দিবস এবং তাকদিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ আকিদার আলোচনা রয়েছে সূরায়। সূরার শুরুতে কেয়ামতের আসন্নতার কথা বলার পর নবীজির বিশেষ মোজেজা তথা হাতের ইশারায় চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সূরায় পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত বিভিন্ন জাতির আলোচনার পর বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘বল, কেমন ছিল আমার সাজা-শাস্তি!’ এ প্রশ্ন করার পাশাপাশি
(সংগ্রীহিত : এস এম হাফিজুর রহমান নিক্সন / শাহরিয়ার কবির)