ইস্তিগফার কি
আরবী ‘ইস্তিগফার’ (الإستغفار) শব্দের অর্থ ক্ষমা চাওয়া। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় দু‘আ ও তাওবাহ্ ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে ‘ইস্তিগফার’ বলা হয়। পাপ মোচনের প্রথম মাধ্যম হলো ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
পাপের পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার নাম ইস্তিগফার। কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন,
وَاسْتَغْفِرِ اللّٰهَ إِنَّ اللّٰهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থঃ ‘‘আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ [সূরা আন্ নিসা ০৪ : ১০৬]
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহর ক্বসম! আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও অধিক ইস্তিগফার করি (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই) এবং তাওবাহ করি।” (বুখারী ৫/২৩২৪)l;
কেন আমরা ইস্তিগফার করবো?
আমরা ইস্তিগফার করবো পাপ থেকে মুক্তির জন্য, হতাশা থেকে মুক্তির জন্য। গুনাহ করতে করতে আমরা একটা পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ি যে, আমরা এত গুনাহ করেছি, আল্লাহ কি মাফ করবেন? এই ভেবে হতাশ হয়ে পড়ি আর সেই সুযোগে শয়তান আমাদের দ্বারা আরও গুনাহ করায়।
শয়তানকে আমরা তিনবার সফল করি : প্রথমবার গুনাহ করে; দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে; তৃতীয়বার ইস্তিগফার ও তাওবাহ্ না করে গুনাহ করতে থেকে। তাই শয়তানকে ব্যর্থ করে আমরা যদি সফল হতে চাই এবং হতাশা থেকে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন এবং সকল গুনাহ মাফ করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلٰى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّه هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘‘বল, ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।’’[সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৫৩]
এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো যে, শয়তানের প্ররোচনায় যত গুনাহই আমরা করে ফেলি না কেনো আমাদের হতাশ হওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমতের আশায় আশাবাদী হয়ে তাঁর কাছে মাফ চাইতে থাকতে হবে। তিনি ছাড়া মাফ করার আর কে আছে?
ইস্তিগফার কিভাবে করতে হয়
ইস্তিগফার যে কোন শব্দেই করা যায়। এমনকি “ইয়া আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন!” বলে দুয়া করলেও হবে।
তবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে বাক্যে ইস্তিগফার করেছেন, সে বাক্যে ক্ষমা চাওয়া নিঃসন্দেহে অতি উত্তম! নিম্নে হাদীসে বর্নিত কিছু ইস্তিগফার দেয়া হলো!
১. ﺃﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ (আস্তাগফিরুল্লাহ)। শুধু আস্তাগফিরুল্লাহ বলা।
“রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছলাত শেষে ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলতেন।” (মুসনাদে আহমদ- ২২৪০৮)
২. ﺃﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﺍﻟﻌَﻈِﻴﻢَ ﺍﻟَّﺬِﻱ لَا اِلٰهِ ﺇﻻَّ ﻫُﻮَ، ﺍﻟﺤَﻲُّ ﺍﻟﻘَﻴُّﻮﻡُ، ﻭَﺃﺗُﻮﺏُ ﺇﻟَﻴﻪِ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এই দু‘আ পাঠ করবেঃ আসতাগফিরুল্লাহাল আযীম, আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়ূম ওয়া আতূবু ইলায়হি’’ সে জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করলেও তাকে ক্ষমা করা হবে। (আবু দাউদ ১৫১৭)
৩. ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻰَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে একশো বার এ দু’আ পাঠ করেছেন এবং আমরা তা গণনা করেছিঃ ‘রব্বিগফিরলী ওয়াতুব ‘আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহীম।’ (আবু দাউদ -১৫১৬)
৪. ﺃﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺃﺗُﻮﺏُ ﺇﻟَﻴﻪِ
আবু হোরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চাইতে কাউকে অধিক এই ইস্তিগফার বলতে শুনি নি “আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি”! (নাসায়ী কুবরা- ১০২১৫)
৫. ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
(সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, আসতাগফিরুল্লাহি ওয়া আতুবু ইলাইহ)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব বেশি বেশি এই দুয়া পড়তেন। এমনকি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকালের আগেও এই দুয়াটা অনেকবার করেছেন। (সহীহ মুসলিম- ৪৮৪)
তবে, সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইস্তিগফার হলো, “সাইয়িদুল ইস্তিগফার” ।
৬. اَللّٰهُمَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ لَا اِلٰهِ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ، ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ، ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ، ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ، ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ، ﺇِﻧَّﻪُ لَا ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
যেটি সকালে পড়লে ওই দিন সন্ধ্যার আগে মারা গেলে জান্নাতে যাবে। আর সন্ধ্যায় পড়লে সকাল হওয়ার আগে মারা গেলে জান্নাতে যাবে। (সহীহ বুখারী ৬৩০৬)।
ইস্তিগফার এর ১৭টি উপকারিতা
১। অধিক ইস্তিগফারের কারণে প্রচুর বর্ষণ হয়। বাগান ও শস্যে ভালো ফসল হয়। নদী-নালা থাকে জীবন্ত।
২। ইস্তিগফারকারীকে আল্লাহ উত্তম সন্তান, সম্পদ ও জীবিকার দ্বারা সম্মানিত করেন।
৩। দীন পালন সহজ হয়। এবং কর্মজীবন হয় সুখের।
৪। আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব আছে, তা ঘুচে যায়।
৫। ইস্তিগফারকারীর কাছে দুনিয়াকে খুব তুচ্ছ করে দেয়া হয়।
৬। মানব ও জীন শয়তান থেকে তাকে হিফাযত করা হয়।
৭। দীন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।
৮। আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়।
৯। বিচক্ষণতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
১০। দুশ্চিন্তা, পেরেশানি দূর হয়।
১১। বেকারত্ব দূর হয়।
১২। আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জিত হয়। তার তাওবার কারণে আল্লাহ আনন্দিত হন।
১৩। মৃত্যুর সময় ফেরেস্তারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে।
১৪। হাশরের মাঠে মানুষ যখন প্রচন্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে, তখন ইস্তিগফারকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।
১৫। কিয়ামাতের দিন মানুষ যখন অস্থির থাকবে, ইস্তিগফারকারী তখন ডানপন্থী মুত্তাকিনদের দলে থাকবে।
১৬। মন্দ কজ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
১৭। আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণও তার জন্য দু’আ করেন।
[ নাযরতুন নাঈম ফি মাকারিমি আখলাকির রাসূলঃ ২/৩০২ ]
কুরআনে কারীমের কিছু আয়াত যেগুলো গুনাহ মাফের দু‘আর সাথে সম্পৃক্ত
১. رَبِّ إِنِّىْ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ فَاغْفِرْ لِىْ
উচ্চারণ : রব্বি ইন্নী যলামতু নাফসী ফাগফিরলী।
অর্থ : হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নফ্সের প্রতি যুল্ম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। [সূরা আল ক্বসাস ২৮ : ১৬।]
২. أَنْتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ
উচ্চারণ : আনতা ওয়ালিয়্যুনা- ফাগফিরলানা- ওয়ারহামনা- ওয়া আনতা খাইরুল গা-ফিরীন।
অর্থ : আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং আপনি উত্তম ক্ষমাশীল।
[সূরা আল আ‘রাফ ০৭ : ১৫৫]
৩. رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ : রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর্ র-হিমীন।
অর্থ : হে আমাদের রব! আপনি ক্ষমা করুন, দয়া করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।[সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ১১৮]
৪. رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : রব্বানা- আতমিম লানা- নূরানা- ওয়াগফিরলানা- ইন্নাকা ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।
অর্থ : হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।[সূরা আত্ তাহরীম ৬৬ : ০৮।]
৫. سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
উচ্চারণ : সামি‘না- ওয়া আত্বা‘না- গুফরা-নাকা রব্বানা- ওয়া ইলাইকাল মাসীর।
অর্থ : আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই (নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।[সূরা আল বাক্বারাহ্ ০২ : ২৮৫]
৬. رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ … وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
উচ্চারণ : রব্বানা- তাক্বববাল মিন্না- ইন্নাকা আন্তাস্ সামী‘উল ‘আলীম। ওয়াতুব ‘আলায়না-, ইন্নাকা আনতাত্ তাওওয়া-বুর্ রহীম।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব্! আপনি আমাদের পক্ষ হ’তে এটি কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’। ‘আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি অধিক তওবা কবূলকারী ও দয়াময়’।[সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১২৭-২৮]
৭. ভুল-ভ্রান্তিবশতঃ কোন কাজ হয়ে গেলে তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার দু‘আ :
رَبَّنَا لَاتُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
উচ্চারণ : রব্বানা- লা- তুআ-খিযনা ইন্নাসীনা- আও আখত্বা’না-।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব্! আমাদের দায়ী করেন না যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি’।
[সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১২৭-২৮]
৮. কোন কাজ সহজ হওয়া ও কাজ সম্পাদনে ভুল-ত্রুটি ক্ষমা চাওয়া এবং বরকত চাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَه عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِه وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
উচ্চারণ : রব্বানা- ওয়ালা- তাহমিল ‘আলায়না ইসরান কামা- হামালতাহূ ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্ববলিনা- রব্বানা- ওয়ালা- তুহাম্মিলনা- মা-লা- ত্বা-ক্বাতা লানা- বিহী, ওয়া‘ফু ‘আন্না- ওয়াগফির লানা- ওয়ারহামনা- আনতা মাওলা-না- ফানসুরনা- ‘আলাল ক্বওমিল কা-ফিরীন।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব্! আমাদের ওপর ভারী ও কঠিন কাজের বোঝা অর্পণ করেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের ওপর অর্পণ করেছিলে। হে আমাদের রব্! আমাদের ওপর এমন কঠিন দায়িত্ব দিয়েন না যা সম্পাদন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের রব্! সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন’।[সূরা আল বাক্বারাহ্ ০২ : ২৮৬]
৯. গুনাহ মাফ ও জাহান্নামের ‘আযাব থেকে বাঁচার দু‘আ :
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : রব্বানা- ইন্নানা- আ-মান্না- ফাগফিরলানা- যুনূবানা- ওয়াক্বিনা- ‘আযা-বান্ন-র।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব্! নিশ্চয় আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের ‘আযাব হ’তে রক্ষা করুন’।[সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১৬]
১০. জাহান্নামের ‘আযাব থেকে বাঁচার এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করার জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ – رَبَّنَا إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَه وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ – رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُّنَادِىْ لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ –
উচ্চারণ : রব্বানা- মা- খলাক্বতা হা-যা-বা-ত্বিলান, সুবহা-নাকা ফাক্বিনা- ‘আযা-বান্ন-র। রব্বানা- ইন্নাকা মান্ তুদখিলিন্না-রা ফাক্বদ্ আখযাইতাহূ, ওয়া মা- লিযযা-লিমীনা মিন্ আনসা-র। রব্বানা- ইন্নানা- সামি‘না- মুনা-দিআয় ইউনা-দী লিল ঈমা-নি আন্ আ-মিনূ বিরব্বিকুম ফা- আ-মান্না-, রব্বানা- ফাগফিরলানা- যুনূবানা- ওয়া কাফফির ‘আন্না- সাইয়িআ-তিনা- ওয়া ত্বওয়াফফানা- মা‘আল আবরা-র।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব্! তুমি এগুলিকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। মহা পবিত্র আপনি। অতএব আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের ‘আযাব থেকে বাঁচান’! ‘হে আমাদের রব্! নিশ্চয় আপনি যাকে জাহান্নামে নিষ্পাপ করেন, তাকে আপনি লাঞ্ছিত করব। আর সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্যে তো কোন সাহায্যকারী নেই’। ‘হে আমাদের রব্! নিশ্চয় আমরা একজন আহবানকারীকে (মুহাম্মাদ) শুনেছি যিনি ঈমানের প্রতি আহবান করছেন এই বলে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। অতঃপর সে মতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব হে আমাদের রব্! আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন ও আমাদের দোষ-ত্রুটিসমূহ মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের সাথে মৃত্যুদান করুন (অর্থাৎ তাদের মধ্যে শামিল কর)’।[সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৯১-১৯৩]
১১. আল্লাহর হুকুম অমান্য করার পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণ : রব্বানা যলামনা- আনফুসানা- ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা- ওয়া তারহামনা- লানাকূনান্না মিনাল খা-সিরীন।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব্! আমরা আমাদের নিজেদের উপর যুল্ম করেছি। এক্ষণে যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, তাহ’লে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব’।[সূরা আল আ‘রাফ ০৭ : ২৩]
১২. নিজের ও ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চেয়ে দু‘আ :
رَبِّ اغْفِرْ لِىْ وَلِأَخِىْ وَأَدْخِلْنَا فِىْ رَحْمَتِكَ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ : রব্বিগ্ ফিরলী ওয়ালি আখী ওয়া আদখিলনা- ফী রহমাতিকা ওয়া আনতা আরহামুর্ র-হিমীন।
অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে মাফ করো এবং আমার ভাইকে মাফ করো। এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাও। বস্তুত তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু’।[সূরা আল আ‘রাফ ০৭ : ১৫১।]
১৩. অবৈধ ও নিষিদ্ধ বিষয়ের কামনা করলে যে পাপ হয়, তা ক্ষমার জন্য দু‘আ :
رَبِّ إِنِّىْ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِىْ بِه عِلْمٌ وَإِلَّا تَغْفِرْ لِىْ وَتَرْحَمْنِىْ أَكُنْ مِّنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণ : রব্বি ইন্নী আ‘ঊযুবিকা আন্ আস্আলাকা মা- লায়সা লী বিহী ‘ইলমুন্, ওয়া ইল্লা- তাগফিরলী ওয়া তারহামনী আকুম্ মিনাল খা-সিরীন।
অর্থ : ‘হে আমার রব! আমি তোমার নিকট এমন বিষয়ে আবেদন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যে বিষয়ে আমার কোন জ্ঞান নেই। এক্ষণে যদি আপনি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তাহ’লে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’।[সূরা হূদ ১১ : ৪৭]
১৪. সন্তানাদিসহ নিজে মুসল্লী হওয়া এবং পিতা-মাতা সহ সমস্ত মুসলিম ব্যক্তির জন্য দু‘আ (ইবরাহীম (আ.)-এর দু‘আ) :
رَبِّ اجْعَلْنِىْ مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِىْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ – رَبَّنَا اغْفِرْ لِىْ وَلِوَالِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ –
উচ্চারণ : রব্বিজ্‘আলনী মুক্বীমাস্ সলা-তি ওয়া মিন্ যুররিইয়্যাতী, রব্বানা- ওয়া তাক্বব্বাল্ দু‘আ-। রব্বানাগফিরলী ওয়ালি ওয়া-লি দাইয়্যা ওয়ালিল্ মু’মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকূমুল্ হিসা-ব।
অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে ছালাত ক্বায়িমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের রব্! আমার দু‘আ কবূল করুন’! ‘হে আমাদের রব্! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং ঈমানদার সকলকে ক্ষমা করুন যেদিন হিসাব দন্ডায়মান হবে’।[সূরা ইব্রা-হীম ১৪ : ৪০-৪১]
১৫. আল্লাহর রহমত কামনা ও ক্ষমা চাওয়ার দু‘আ :
رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ : রব্বানা- আ-মান্না- ফাগফির্ লানা- ওয়ার্হামনা- ওয়া আন্তা খাইরুর্ রা-হিমীন।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব্! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’।[সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ১০৯]
১৬. হিংসা-বিদ্বেষ দূর করার দু‘আ :
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِىْ قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
উচ্চারণ : রব্বানাগফির লানা- ওয়া লিইখ্ওয়া-নিনাল্লাযীনা সাবাকূনা- বিল ঈমা-নি ওয়ালা- তাজ্‘আল ফী কুলূবিনা- গিল্লাল লিল্লাযীনা আ-মানূ রব্বানা- ইন্নাকা রাঊফুর্ রহীম্।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে ও আমাদের পূর্ববর্তী ভাইয়েরা যারা ঈমান এনেছে তাদের ক্ষমা কর, ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের রব্! নিশ্চয় আপনি দয়ালু পরম করুণাময়’।[সূরা আল হাশর ৫৯ : ১০]
১৭. কাফেরদের ওপর বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা :
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
উচ্চারণ : রব্বানাগফির লানা- যুনূবানা- ওয়াইসরা-ফানা- ফী আমরিনা- ওয়া সাব্বিত আক্বদা-মানা- ওয়ানসুরনা- ‘আলাল্ ক্বওমিল কা-ফিরীন।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব! আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিন, আর আমাদের কাজে যতটুকু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে তাও মাফ করে দিন। আমাদেরকে দৃঢ় রাখুন এবং কাফেরদের ওপর আমাদেরকে সাহার্য করুন’।
[সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৪৭]
১৮. ফিতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা :
رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ – رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ –
উচ্চারণ : রব্বানা- ‘আলায়কা তাওয়াক্কালনা- ওয়া ইলায়কা আনাবনা- ওয়া ইলায়কাল মাসীর। রব্বানা- লা- তাজ্‘আলনা- ফিতনাতাল লিল্লাযীনা কাফারূ ওয়াগফিরলানা- রব্বানা- ইন্নাকা আন্তাল্ ‘আযীযুল হাকীম।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব! আমরা আপনার ওপরই ভরসা করেছি, আপনার দিকেই মুখ করেছি এবং আপনার দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। হে আমাদের রব্! আপনি আমাদেরকে কাফেরদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করবেন না। হে আমাদের, রব্! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, নিশ্চয় আপনি মহা শক্তিধর ও প্রজ্ঞাময়’।[সূরা আল মুমতাহিনাহ্ ৬০ : ৪-৫]
১৯. বালা-মুসীবাত ও মহামারির সময় পিতা-মাতা ও মু’মিনদের রক্ষার জন্য ও যালিমদের ধ্বংসের জন্য নূহ (আ.)-এর দু‘আ :
رَبِّ اغْفِرْ لِىْ وَلِوَالِدَىَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَّلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا
উচ্চারণ : রব্বিগফিরলী ওয়ালি ওয়া-লি দাইয়্যা ওয়ালিমান দাখালা বায়তিয়া মু’মিনাও ওয়ালিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-তি ওয়ালা- তাযিদিযয-লিমীনা ইল্লা- তাবা-রা-।
অর্থ : ‘হে আমার রব্! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে ক্ষমা করুন, আর যে ব্যক্তি আমার বাড়ীতে মু’মিন অবস্থায় প্রবেশ করবে তাকে ক্ষমা করুন এবং সকল মু’মিন নর-নারীকে ক্ষমা করুন। আর যালিমদের ধ্বংস বৃদ্ধি করুন’।[সূরা নূহ ৭১ : ২৮]
২০. পাপ ক্ষমা চেয়ে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ :
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : রব্বানা- ইন্নানা আ-মান্না- ফাগফিরলানা- যুনূবানা-, ওয়া ক্বিনা- ‘আযা-বান্না-র।
অর্থ : ‘হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আপনি আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হ’তে রক্ষা করুন’।[সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৬]
আল্লাহ্ আমাদেরকে নিয়মিত ইস্তিগফারের আমাল করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
পোস্টটি শেয়ার করুন অথবা কপি করে ওয়ালে পোস্ট করুন। এভাবে আপনি দাওয়াতি কাজে অংশ নিতে পারেন। কারণ
* রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রচার করো যদি একটি আয়াতও হয়” (সহিহ বুখারি)।
* “কেউ কোনো বিশুদ্ধ আমল প্রচার করার ফলে অন্য কেউ তা করে, সেও তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে” (সহিহ মুসলিম)
আপনার প্রচারের ফলে যত মানুষ উপকৃত হবে, এর সওয়াব আপনিও লাভ করবেন। (সংগৃহীত)