১ মিনিটে আপনি হয়তো দুনিয়া উদ্ধার করতে পারবেন না। তবে সারাদিনের ব্যস্ততা থেকে ১ মিনিটের সময় নিয়ে আপনি কিছু আমল করতে পারেন, যার পুরষ্কার দুনিয়া উদ্ধার থেকেও বিশাল।
এই আমলগুলো করতে তেমন কোন কষ্ট নেই। যা করে ফেলা যায় আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে বা হেঁটে হেঁটেই।
কী সেই আমলগুলো?
আসেন দেখি-
(১) সূরা ফাতিহা ৩ বার। কেউ কেউ হিসাব কষে দেখিয়েছেন ১ বার সূরা ফাতিহা পড়লে ৬০০ টিরও বেশি নেকি পাওয়া যায়। তাই এক মিনিটে ১৮০০ এর বেশি নেকি।
(২) সূরা ইখলাস ৩ বার। ১ বার এই সূরা পড়লে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই ৩ বার পড়া মানে ১ বার কুরআন খত্পম এবং জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ। প্রতিদিন এই আমল এক মিনিট করলে মাসে সূরা ইখলাস পড়া হবে ৩০০ বার অর্থাৎ ১০০ বার কুরআন খতমের সওয়াব।
(৩) কুরআন থেকে পড়ে ফেলতে পারেন আধা পৃষ্ঠা।
(৪) কুরআনের ছোট্ট একটি আয়াত মুখস্থ করতে পারেন।
(৫) এই দুয়াটি ২০ বার পড়তে পারেন।
لَا إِلٰهِ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ- لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়্যিন কদির)
এর সওয়াব ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এর বংশের ৮ জন দাসকে আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত করার সমান।
(৬) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহ’ ১০০ বার পড়তে পারেন। এই আমলকারীর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, গুনাহর পরিমাণ সমুদ্রের ফেনার সমান হলেও।
(৭) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহ ওয়া সুবহানাল্লাহিল আযিম’ ৫০ বার পড়তে পারেন। এ দুটি এমন বাক্য যা পড়তে খুব সহজ, আমলের পাল্লাতে অনেক ভারী, রহমানের নিকটে অতি প্রিয়।
(৮) নবীজি সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সুবহানাল্লহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ, আল্লহু আকবার পাঠ করা যা কিছুর উপর সূর্য উদিত হয়েছে সবকিছু থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়।” আপনি এক মিনিটে বাক্যগুলো ১৮ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যগুলো আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়। আমলের পাল্লাতে অনেক ভারী।
(৯) এক মিনিটে আপনি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ ৪০ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যটির সওয়াব যেনো জান্নাতের জন্য জমা করে রাখা অমূল্য রত্ন। এটি কষ্টকর দায়িত্ব ও কঠিন কাজসমূহ ঠিক মতো করার মহৌষধ।
(১০) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ প্রায় ৫০ বার। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য ও তাওহীদের বাণী। যার শেষ কথা হবে এই বাক্য তিনি প্রবেশ করবেন জান্নাতে।
(১১) ১০ বার
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
(আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমান, তাঁর সন্তুষ্টির সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান, তাঁর বাক্যমালার কালির সমান)। সাধারণ তাসবীহ ও যিকিরের চেয়ে এ বাক্যগুলো পড়ার সওয়াব অনেকগুণ বেশি।
(১২) ১০০ বারের বেশি ইসতিগফার অর্থাৎ আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে পারেন। এটি ক্ষমা প্রাপ্তি ও জান্নাতে প্রবেশের উপায়। এটি সুখওয়ালা জীবন, শক্তি বৃদ্ধি, বিপদ-আপদ দূর, সকল কাজ সহজে করা, বৃষ্টি বর্ষণ, সম্পদ ও সন্তান বৃদ্ধির মাধ্যম।
(১৩) এক মিনিটে আপনি সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে পারেন যার জন্য আল্লাহ হয়তো এমন কোন কল্যাণের পথ খুলে দিবেন যা আপনি ভাবতেও পারেননি।
(১৪) ৫০ বার দরুদ পড়তে পারেন। “আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ”। যার প্রতিদানে আল্লাহ আপনার উপর এর ১০ গুণ, মানে ৫০০ বার সালাত (রহমত) পাঠাবেন।
(১৫) এক মিনিটে আপনার মন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, তাঁর ভালবাসা, তাঁর ভয়, তাঁর প্রতি আশা এবং তাঁর প্রেমে উদ্বেল হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি উবূদিয়্যাহ্ (আল্লাহর দাসত্ব) এর স্তরসমূহ অতিক্রম করতে পারেন; হতে পারে সে সময় আপনি হয়তো আপনার বিছানায় শুয়ে আছেন অথবা কোন রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন।
(১৬) এক মিনিটে আপনি কোন ইসলামি বইয়ের ১ পৃষ্ঠার বেশি পড়তে পারেন।
(১৭) এক মিনিটে আপনি আপনার কোন আত্মীয়কে ফোন করে ‘সিলাতুর রাহেম’ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার আমল পালন করতে পারেন।
(১৮) এক মিনিটে আপনি দুই হাত তুলে ব্যাপক অর্থবোধক দোয়াগুলো হতে নিজ পছন্দমত যে কোন দোয়া করতে পারেন।
(১৯) এক মিনিটে আপনি কয়েকজন ব্যক্তিকে সালাম দিতে পারেন ও তাদের সাথে মুসাফাহা করতে পারেন।
(২০) এক মিনিটে আপনি কোন ব্যক্তিকে একটি মন্দ কাজ থেকে বারণ করতে পারেন।
(২১) এক মিনিটে আপনি একটি ভাল কাজের আদেশ করতে পারেন।
(২২) এক মিনিটে আপনি একজন ভাইকে নসিহত করতে পারেন।
(২৩) এক মিনিটে আপনি একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারেন।
(২৪) এক মিনিটে আপনি পথ থেকে ক্ষতিকর কোন বস্তু সরিয়ে দিতে পারেন।
এই এক মিনিটের সদ্ব্যবহার, অবহেলায় কাটানো বাকি সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করার অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করবে ইন শা আল্লাহ্।।
জেনে রাখুন, এই আমলগুলোর বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না। এগুলোর অধিকাংশের জন্যই আপনার পবিত্রতার প্রয়োজন নেই, ক্লান্তি বা শারীরিক উঠাবসা নেই।
বরং আপনি এ আমলগুলো করতে পারেন যখন আপনি পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন, গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন, শুয়ে আছেন অথবা দাঁড়িয়ে আছেন। এমনিই বসে আছেন অথবা কারও জন্য অপেক্ষা করছেন।
এ আমলগুলো জীবনটাকে সুখ দিয়ে ভরে ফেলার উপায়, আত্মপ্রশান্তির আর দুঃশ্চিন্তা দূর করার ওষুধ।
আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দিন। আমাদের নবীজির প্রতি বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও শান্তি।
(ওপরের লেখাটি ড. মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল-হামাদ প্রণীত ‘এক মিনিটকে কাজে লাগানোর সর্বোত্তম উপায়’ লিফলেট থেকে সংকলন করেছেন শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ তার islamqa সাইটে। একটু পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে প্রকাশ করা হল।)
পোস্টটি শেয়ার করুন অথবা কপি করে ওয়ালে পোস্ট করুন। এভাবে দাওয়াতি কাজে অংশ নিতে পারেন। কারণ
* “কেউ কোনো বিশুদ্ধ আমল প্রচার করার ফলে অন্য কেউ তা করে, সেও তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে” (সহিহ মুসলিম)
আপনার প্রচারের ফলে যত মানুষ উপকৃত হবে, এর সওয়াব আপনি লাভ করবেন ইন শা আল্লাহ্। ।
* রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রচার করো যদি একটি আয়াতও হয়” (সহিহ বুখারি)।