আযান এর ইতিহাস

আযানের সুচনা

ইসলামের প্রাথমিক যুগে পবিত্র নগরী মক্কায় আজান ছাড়াই ছলাত পড়া হতো। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করে মসজিদ নির্মাণ করলেন তখন মুসলমানদের ছলাতের অংশগ্রহণের জন্য একত্রিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট সংকেত নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন এবং সাহাবাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন।
সাহাবায়েকেরাম ছলাতে অংশগ্রহণ একত্রিত হওয়ার জন্য সংকেত ঠিক করতে পরামর্শ সভায় বসলেন। পরামর্শ সভায় ৪টি প্রস্তাব উপস্থাপন হয় যথা:

  • ঝাণ্ডা উড়ানো;
  • আগুন প্রজ্জ্বলন;
  • শিঙ্গা বাজানো;
  • ঢোল বাজানো।


পরমার্শ সভার ৪টি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করা হয়। কারণ ঝাণ্ডা উড়ালে সব মানুষ তা বাড়ি বা দূর থেকে দেখতে পাবে না। দ্বিতীয়ত আগুন প্রজ্বলন অগ্নি উপাসকদের কাজ। তৃতীয়ত শিঙ্গা বাজানো খ্রিস্টানদের কাজ আর চতুর্থত ঢোল বাজানো ইয়াহুদিদের কাজ। এ কারণে সেদিন সমাধান ছাড়াই পরামর্শ সভার মূলতবি করা হয়।

সাহাবায়েকেরামগণ এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে করতেই যার যার বাড়ি চলে গেলেন। ঐ রাতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) স্বপ্নে দেখেন যে ‘এক ব্যক্তি শিঙ্গা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ঐ ব্যক্তিকে শিঙ্গাটি বিক্রি করতে বললে। শিঙ্গাটি কেনার কারণ জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) বললেন, ‘আমি শিঙ্গাটি দিয়ে মানুষকে ছলাতে আসার জন্য আহ্বান করব।’তখন শিঙ্গার মালিক ব্যক্তি বলল, ‘আমি কি এটি হতে উত্তম একটি জিনিসের সংবাদ দিব না?’-এ বলে তিনি আজানের বাক্যগুলো তাঁকে শিখিয়ে দিলেন।

সকালে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে স্বপ্নের কথাগুলো জানালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার স্বপ্ন সত্য। তুমি বেলালকে ছলাতের বাক্যগুলো শিখিয়ে দাও। আজ থেকে বেলাল আজান দেবে।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) শেখানো বাক্যগুলো দিয়ে হজরত বেলাল (রাঃ) আজান দিলে, তা শুনে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয় নবির দরবারে দৌড়ে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। অবশ্যই আমি অবিকল এ বাক্যগুলোই স্বপ্নে দেখেছি।’ – উল্লেখ্য যে, ঐ রাতে একই স্বপ্ন সাহাবিদের মধ্য থেকে ১৪ জনই দেখেন যার মাধ্যমে নিয়মিত হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ছলাতের জন্য আজান দিতেন।

হযরত বেলাল (রাঃ) ইসলামের ইতিহাসে প্রথম আযান প্রদান করেন। তার আযানের ধ্বনি শুনে মদীনাবাসী একত্র হয়ে মসজিদ-এ-নববীতে আসেন সালাত আদায় করার জন্য। তিনিই প্রথম হেরাম শরীফ-এর উপরে উঠে মক্কাবাসীকে আযান শোনান।

ফজরের আজানের বাড়তি বাক্য ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ সম্পর্কে জানা যায় যে একদিন ফজরের সময় হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু আজান দিতে আসলেন, তখন তাকে বলা হলো, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমে আছেন। তখন হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন-‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম। অর্থাৎ ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম।’ হজরত সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব বলেছেন, ‘পরে ফজরের আজানের সঙ্গে এ বাক্যটি শমিল করে দেয়া হয়।’

আর এভাবেই সর্বপ্রথম আজানের প্রচলন হয়। আজানের আওয়াজ শুনার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানরা মসজিদে জামাআতে ছলাত আদায়ে একত্রিত হয়। জামাআতে ছলাত আদায়ের জন্য আজান দেয়া সুন্নাত। আবার কোন কোন ইমাম একে ওয়াজিব বলেছেন। তবে আজান দেয়া সুন্নাত বা ওয়াজিব যা-ই হোক না কেন, আজান ইসলামের প্রতীক। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কারও বিপরীতে অভিযান পরিচালনা করতেন; ঐ সময় তাদের মধ্য থেকে যদি আজানের ধ্বনি আসত তবে তিনি তাদের সঙ্গে অভিযান বন্ধ করে দিতেন এবং বলতেন, ‘তারা মুসলিম।’